Halloween Costume ideas 2015

নাটোরে অটোরিক্সা ভাড়ায় নৈরাজ্য! রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার


মোঃ কামাল হোসেন: নাটোর জেলার অটোরিক্সা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে কে? বিআরটিএ, পৌরসভা, ট্রাফিক পুলিশ নাকি অটোরিক্সা মালিক সমিতি? এর উত্তর খুজতে গিয়ে জানলাম বিআরটিএ, পৌরসভা, পুলিশ কারো নিয়ন্ত্রণে নেই অটোরিক্সা, এর ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার! আর ঠকছে সাধারণ যাত্রিরা। অথচ নাটোরের রাস্তার বেশির ভাগ জায়গা দখল করে চলে এই অটোরিক্সা। এর পর জানতে চাইলাম, নাটোর শহরে ঠিক কত হাজার অটো চলাচল করে? কিন্তু এর সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারলেন না। আধুনিক এই যুগে চিন্তা করা যায় একটি স্বাধীন দেশের রাস্তার বেশিরভাগ দখলকারি যানের সংখ্যা কেউ জানে না। তাও আবার জেলা শহরে? যেখানে আবার সরকারি সংস্থার সকল শাখা রয়েছে। কেউ বলছেন ৫০০০  আবার কেউ বলছেন ১০০০০ অটোরিক্সা চলে নাটোর সদরে। তবে রাস্তায় রাস্তায় যানজট দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে, তা কয়েক হাজার হবে। এই অটোরিক্সা পৌরসভার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নাটোর শহরে চলার কথা, তাছাড়া শহরের বাহির হতে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের স্টিকারধারী কয়েক হাজার অটোরিক্সাও চলার কথা। কিন্তু কোন কোনটির রেজিস্ট্রেশনই নাই। বাস্তবতা হল বিআরটিএ, পৌরসভা, পুলিশ কারো নিয়ন্ত্রণে নেই অটোরিক্সা। ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে পৌরসভা, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার! নাটোর জেলার পাশের জেলা রাজশাহীতে শহর জুড়ে তো বটেই গ্রামেও চলছে অটোরিক্সা, তবে রাজশাহী শহরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন অটোরিক্সার লাইসেন্স দিচ্ছে এবং ভাড়াও তারাই নির্ধারণ করে দিয়েছে। তো গেল নিয়ন্ত্রন করার কথা।
ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে চলছে নৈরাজ্য, যেন দেখার কেউ নাই। যেন এক মগের মুল্লুক! সারা পৃথিবীতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটারের ভিত্তিতে। কিন্তু নাটোরে এর ব্যতিক্রম। যদি স্টপেজ অনুযায়ী যদি ভাড়া ধরা হয় তাহলে তো স্টপেজে যাত্রী উঠা-নামা করাতে হবেযেখানে সেখানে নয়, কিন্তু তাই হচ্ছে, যেখানে সেখানেই যাত্রী উঠা-নামা করছে। যাত্রী ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সাথে ঝগড়াও চলছে। কয়েক দিন আগেও যাত্রীদেরকে নাটোর সদর থানা মালিক সমিতির স্টিকার দেখিয়ে হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হতো। নাটোর সদর থানা মালিক সমিতির খোজ নিয়ে জানা গেছে সমিতি ছিল অবৈধ ছিল কিন্তু সমিতির নামে নাটোর শহরের প্রবেশ মুখে তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে শহরের মানুষদের মালিকানার অটোরিক্সা থেকে দৈনিক টাকা শহরের বাহিরের অটোরিক্সা থেকে ২০ টাকা আদায় করা হতো, কেউ না দিলে নানা রকম অত্যাচার করা হতো। এই খাত থেকে কত টাকা আদায় হতো কেউ জানে না। তবে গুঞ্জন ছিল লক্ষাধিক টাকা প্রতিদিন আদায় করা হতো। তাছাড়া রেজিস্টেশন বাবদও টাকা নেওয়া হতো। মজার ব্যাপার হলো অবৈধ সমিতি হতে অটোরিক্সা রেজিস্টেশন করে দেওয়ার জন্য একটি দালাল শ্রেণি গড়ে উঠেছিল! যারা কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে রেজিস্টেশন করে দেওয়ার জন্য টাকা নিত!
অটো মালিকদের স্বার্থ দেখার জন্য অবৈধ হলেও একটি সমিতি ছিল। নাটোরে যারা ইচ্ছামত ভাড়া নির্ধারণ করে মালিকদের লাভবান করে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। অবৈধ সমিতি অবৈধভাবে চাঁদা তুলে, যাত্রিদের পকেট কেটে, অটো চালকদের লাভবান করে দেওয়ার একটি নমুণা।
তবে গত ২০মার্চ রোববার অটো চালকরা চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে নাটোর পৌরসভা  ঘেরাও করে এবং  পৌর মেয়রের পরামর্শ ক্রমে নাটোর সদর থানা ঘেরাও করলে পুলিশ সক্রিয় হয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করলে নাটোর শহরের প্রবেশ মুখে চাঁদা তোলা বন্ধ হয়। চালকরা অভিযোগ করে নাটোর সদর থানা মালিক সমিতি অবৈধ কিন্তু অবৈধ সমিতির নির্ধারিত জনসাধারণ ঠকানোর ভাড়ার তালিকা বাতিল ঘোষণা কেউ তো  তারা করেনি।
এবিষয়ে কয়েকজন অটো চালক মজার কিছু তথ্য দিয়েছেন, তারা বলেন, মূলত চাঁদার টাকা ভাগাভাগি দিয়ে মনোমালিন্যের কারণে এতো নাটক!
অবৈধ মালিক সমিতির কল্যাণে লাভবান হচ্ছে মালিকরা আর পকেট কাটছে জনসাধারণের। তাহলে যাত্রীদের বা জনসাধারণের স্বার্থ দেখার জন্য কে আছেনবিআরটিএ, পৌরসভা, পুলিশ কেউ তো কোন দায়িত্ব নিচ্ছে না। তবে কি এসকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যকরিতা শেষ হয়ে গেছে? যদি সরকারি কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকে। তাহলে নানা রকম কর গ্রহণকারি সংস্থার থাকার প্রয়োজনীয়তা কি?
স্টেশন হতে হরিশপুর বাইপাস পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১০ টাকা, এখন তা ১৫ টাকা। আবার হাফরাস্তা থেকে উঠে নাটোর সদর থানার সামনে নামলে ১০ টাকা দিতে হয়। অথচ নাটোর রেল স্টেশন থেকে হরিশপুর বাইপাসের দূরত্বের তিন ভাগের এক ভাগ দূরত্ব এখানে। পৃথিবীর সকল দেশে গাড়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটার ধরে, নাটোরে অটোরিক্সা ভাড়া কিভাবে ধরা হল? কেউ তা জানে না। আবার নাটোর শহরতলীর বনবেলঘরিয়া উত্তরপাড়া বাজার হতে নাটোর শহরে আসতে চাইলে অটো পাওয়া দুষ্কর। নাটোর শহর বিশেষ করে স্টেশন হতে বনবেলঘরিয়া উত্তরপাড়া বাজার যাওয়ার সময় কোন অটোরিক্সা চালক যাত্রী তুলতে চায় না। অথচ উক্ত বনবেলঘরিয়া উত্তরপাড়া বাজারের উপর দিয়ে দিনে কয়েক হাজার অটোরিক্সা তাহেরপুর নলডাঙ্গা রোডে চলাচল করে। তারা দুরের যাত্রী তুলতে বেশি আগ্রহী। তার উপর নাটোর স্টেশন বাজারস্থ পেট্রোল পাম্প একতার মোড় সংলগ্ন এলাকায় সিরিয়াল দেওয়ার নামে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। যারা কখনো কখনো দুই-তিন ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও যাত্রী বোঝাই না করে যেতে চায় না। আবার পিছনের গাড়ী চালককে আগে যেতে যাত্রী তুলতে দেয় না। হায়রে সিরিয়াল! হায়রে সিন্ডিকেট! দেখার কেউ নাই যাত্রী হয়রানির যেন এক মগের মুল্লুক! তারপর আবার অটোচালকদের ব্যবহার দেখলে মনে হয় বনবেলঘরিয়া উত্তরপাড়া বাজার পার্শ¦বর্তী এলাকার বাসিন্দা তাদের পূর্বপুরুষরা এলাকায় বসতি স্থাপন করে মহাপাপ করেছে! এই সমস্যা নাটোর জুড়ে আরো অনেক এলাকায় রয়েছে।
আবার নিচাবাজার হতে জজকোর্টের ভাড়া ছিল টাকা সেখানে এখন নেওয়া হচ্ছে , দিঘাপতিয়া নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা, আগে ছিল ১০ টাকা। আবার স্টেশন থেকে নাটোর পৌরসভা পর্যন্ত ভাড়া টাকা, আবার কয়েক গজ এগিয়ে নাটোর সদর হাসপাতাল গেলে ১০ টাকা দিতে হয়। অথচ পাশের শহর রাজশাহীতে যে যতদুর যাবে সে ততটুকু ভাড়া দিবে। অর্থাৎ মিনিমাম ভাড়া টাকা, এরপর কিলোমিটারের ভিত্তিতে , , , টাকা নির্ধারিত আছে। আর সেভাবে যাত্রি চালকরা লেনদেন করে থাকেন। কিন্তু নাটোরে অটোতে উঠলে গুনতে হয় , ১০, ১৫ টাকা। , , , টাকার কোন বালাই নেই। আর থাকবে কিভাবে কেউ তো এর নিয়ন্ত্রণ করছে না। যারা নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারা ঠিকই মাস শেষে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন!
এবিষয়ে জানতে চাইলে, নাটোর সদর থানা অটোরিক্সা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আঃ রহিমের মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা ¤ভব হয়নি। এরপর নাটোর সদর থানা অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ নান্নু শেখ মোবাইল ধরেননি, তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তারপরে নাটোর সদর থানা অটোরিক্সা মালিক সমিতির সাইনবোর্ডে দেওয়া নাম্বারে কল দিলে সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়দানকারী জালাল উদ্দিন জীবনকে কিলোমিটারের ভিত্তিতে ভাড়া বাড়িয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্ন করলে তিনি এর উত্তর এড়িয়ে যান।
বিআরটিএ, নাটোর এর সহকারি পরিচালক সাদেকুর রহমান বলেন, অটোরিক্সা আমাদের আওতাধীন নয়, তাই এব্যাপারে আমার কিছু বলার নাই।
এব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহমুদুন্নবী বলেন, বেশি ভাড়া নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনার কাছে তো ভাড়ার বৈধ কোন তালিকা নাই, তাহলে কিসের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন, অটোরিক্সাকে সরকার অবৈধ ঘোষণা করায় আমরা এখন এর লাইসেন্স দিচ্ছি না, তাই এর ভাড়া নির্ধারণও আমরা করছি না। তিনি আরো বলেন, পৌর এলাকার মধ্যে  ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি এবং কোন সমিতিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। কেউ টাকা আদায় করে থাকলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।
পৌরসভার বেশিরভাগ রাস্তা অটোরিক্সার দখলে আছে কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আইন প্রয়োগকারি সংস্থার কাজ, আমি জনপ্রতিনিধি।


Post a Comment

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget