গুরুদাসপুর প্রতিনিধি: ষষ্ঠ
শ্রেণি থেকে
মাদক সেবন
শুরু করে
সানজিদা (ছদ্দনাম)। এখন
সে নাজিরপুর
বহুমুখি উচ্চ
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। টানা
চার বছর
মাদক সেবনের
পর নিজের
ভুল বুঝতে
পেরে মাদক
ছেড়ে চিকিৎসা
নিতে রোববার
বিকালে ভর্তি
হয়েছিল হাসপাতালে।
কিন্তু মাদকের
নেপথ্যের নায়করা
তাকে হাসপাতাল
থেকে ওই
রাতেই ভাগিয়ে
নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়,
সানজিদার বাবা
নেই। মায়ের
সাথে নানার
বাড়িতেই থাকে।
গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর বাজারেই তাদের
বাড়ি। সহপাঠিদের
প্ররোচনায় সানজিদা চার বছর ধরে
মাদকদ্রব্য সেবন করছিল। বিষয়টি জানতে
পেরে সানজিদাকে
মাদক থেকে
দুরে সরানোর
চেষ্টা চলছিল।
কিন্তু মাদক
ব্যবসায়ী-সেবনকারী
দালাল চক্রের
উৎপাতে মেয়েকে
মাদক থেকে
সরানো সম্ভব
হচ্ছে না
বলে অভিযোগ
সানজিদার মা
মালেকা বেগমের।
মাদক সেবী কয়েকজন
ছাত্র-ছাত্রী
জানায়, কখনো
ক্লাস শেষে,
কখনো ছুটির
পর। ছাত্রী
বিশ্রামাগারের দরজা বন্ধ করে অন্তত
২০ জন
ছাত্রী ঘন্টাব্যাপি
মাদক সেবন
করে। ছয়
ছাত্রী দিয়ে
মাদক সেবনের
এই যাত্রা
শুরু। এখন
সংখ্যায় বেড়ে
দাঁড়িয়েছে ৩০জনে। গুরুদাসপুরের নাজিরপুর বহুমুখী
উচ্চ বিদ্যালয়ের
ছাত্রী বিশ্রামাগারে
টানা চার
বছর ধরে
চলছে ওই
প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের মাদক সেবনের এই
মহাযজ্ঞ। ফলে
আশক্সক্ষাজনক হারে কমছে ছাত্র-ছাত্রী।
ভেঙ্গে পড়েছে
শিক্ষা ব্যবস্থা।
এতে উদ্বিগ্ন
হয়ে পড়েছেন
অভিভাবকরা।
অভিভাবকদের দাবি, বেশ
কয়েকবার বিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষকে তারা বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রতিবাদও
করেছেন। কিন্তু
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
কোন ব্যবস্থা
নেয়নি। একারনে
ছাত্রীরা নির্বিঘেœ
বিদ্যালয়েই যতেচ্ছাভাবে মাদক সেবন করছে।
তাদের প্ররোচনায়
নতুন করে
অনেক ছাত্র-ছাত্রী এতে
আসক্ত হওয়ায়
তাদের শারিরিক-মানষিক ক্ষতি
হচ্ছে। বাড়ছে
অপরাধ প্রবণতা।
হুমকির মুখে
পড়েছে বিদ্যালয়ের
শিক্ষা ব্যবস্থা।
এতে করে
অনেক অভিভাবক
তাদের সন্তানদের
এই বিদ্যালয়ে
দিতে অনিহা
প্রকাশ করছেন।
ঝুঁকির মুখে
রয়েছে অধ্যয়নরত
শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
বিষয়টি জানলেও
কোন ব্যবস্থা
না নেওয়ায়
ছাত্রীদের কাছে ওই বিশ্রামাগারটি এখন
মাদক সেবনের
অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। তাদের সহযোগীতায়
ছাত্র-ছাত্রীদের
কাছে মাদকের
প্রাপ্যতা সহজলভ্য হয়ে পড়েছে।
ছাত্রী-মাদকসেবীদের একজন
সানজিদা (ছদ্দনাম)। সে ওই বিদ্যালয়ের
নবম শ্রেণির
ছাত্রী। বয়সের
বিবেচনায় এখনো
সে কিশোরী।
সহপাঠিদের প্ররোচনায় নিজেকে উৎসর্গ করেছে
মাদকের মতো
ভুল পথে।
অন্ধকারাচ্ছন্ন দুনিয়ার ভয়াল জীবন বেছে
নেয়া এই
মেয়েটির কাছ
থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিয়েছে
সুন্দর একটি
ভবিষৎ। এ
পথে এসে
সম্ভ্রম হারিয়েছে
সে। সর্বস্ব
হারানো মেয়েটি
এখন দালালচক্রের
অন্যতম হাতিয়ার।
মূলত তার
মাধ্যমেই বিদ্যালয়ের
ছাত্র-ছাত্রীদের
মধ্যে ছড়িয়ে
দেওয়া হচ্ছে
মাদক দ্রব্য।
এসব দ্রব্যের
যোগানদাতা স্থানীয় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী।
যারা তাকে
বিপথগামী করেছে।
বানিয়েছে তাদের
ললাটে আকাঙ্খার
খোরাক। দুষ্ট
চক্রের সক্রিয়
নজরদারির ফলে
এ
রাজ্যে থেকে বের হওয়াটা প্রায়
অসম্ভব হয়ে
পড়েছে সানজিদার
মতো ছাত্রীদের
কাছে। তারমতো
ওই বিদ্যালয়ের
অন্তত ৩০
জন ছাত্রীর
জীবন এখন
বিপন্নের পথে।
সানজিদার মামা জানান,
মাদকাসক্ত হওয়ার পর থেকে সানজিদা
ক্রমেই অন্যমনস্ক
হয়ে পড়ছিল।
সব সময়
বন্ধুদের সাথে
আড্ডা দিত।
পড়া শোনায়
অমনোযোগী হয়ে
পড়ে। তারা
বিষয়টি জানার
পর তাকে
ওই পথ
থেকে ফিরে
আসতে বলে।
পরিবারের কথা
চিন্তা করে
ও লোকলজ্জার
ভয়ে সেও
বেশ কিছুদিন
হলো আর
মাদক সেবন
করছেনা। এ
কারনে তার
শারিরিক সমস্য
দেখা দিচ্ছিল।
রোববার বিকালে
সানজিদা তার
বাড়িতেই হঠাৎ
মাথা ঘুরে
পড়ে যায়।
পরে তাকে
চিকিৎসার জন্য
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি
করা হয়।
কিন্তু চিহিৃত
কিছু মাদক
ব্যবাসায়ী ও সেবনকারীদের হুমকিতে হাসপাতাল
থেকে সানজিদাকে
নিয়ে পালিয়ে
যায় তারা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক
মেডিকেল অফিসার
(আরএমও) রবিউল
করিম বলেন,
মাদক সেবন
না করায়
পেটে ব্যাথা,
ঘুম না
হওয়া, অস্থিরতা,
গলা শুকিয়ে
যাওয়াসহ বেশ
কিছু সমস্য
নিয়ে হাসপাতালে
ভর্তি হয়েছিল
সে। দীর্ঘদিন
মাদক সেবন
করায় সানজিদার
ব্রেণ এবং
লিভারে মারাতœক ক্ষতির
সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্তত সপ্তাহ
খানেক এখানে
চিকিৎসা দেওয়ার
পর তাকে
মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার
কথা। কিন্তু
রোবার রাতেই
সানজিদাকে নিয়ে হাসপাতাল ছেরে পালিয়ে
যায় তার
স্বজনরা।
সানজিদা জানায়, শহরের
মেয়েদের মতো
আধুনিক হতে
গ্রামের স্কুল-কলেজ পর্যায়ের
ছাত্রীরা মাদক
সেবনের মাধ্যমে
আধুনিকতার বর্হিপ্রকাশ ঘটাতে মরিয়া। তাই
সহপাঠিদের হাত ধরে ২০১৩ সালে
মাদকের স্বর্গরাজ্যে
প্রবেশ করে
সে। তখন
সানজিদা নাজিরপুর
উচ্চ বিদ্যালয়ের
ষষ্ঠ শ্রেণির
ছাত্রী। তাদের
বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়
ইসমি নামের
একটি মেয়ে।
ইসমির বাড়ি
নাটোরের দত্তপাড়ায়।
ইসমি আধুনিক
হওয়ায় তাকে
সবাই ভালোবাসে-পছন্দ করে।
ইসমির আধুনিকতায়
অনেকটা মুগ্ধ
সানজিদা নিজেকে
ওই কাতারে
নিতে বেশ
মরিয়া। তাই
ইসমির সাথে
ধীরে ধীরে
বেশ সখ্যতা
গড়ে উঠে
তার। প্রায়ই
ক্লাস শেষে
বিদ্যালয়ের ছাত্রী বিশ্রামাগারের দরজাটা বন্ধ
করে ইসমি
ও তার
ছয় জন
সহপাঠি বিভিন্ন
প্রকারের মাদক
সেবন করে।
কৌতহলবসত বিদ্যালয়
ছুটির পর
ইসমিদের সাথে
যোগ দেয়
সানজিদা। সেদিন
ইসমি ও
অন্য সহপাঠিদের
স্কুল ব্যাগে
বিশেষভাবে নিয়ে আসা কোকের বোতলে
ফেন্সি (ফেন্সিডিল),
ইয়াবা, ভটকাসহ
বিভিন্ন প্রকার
মাদক দ্রব্য
ছিল। সহপাঠিদের
অনুরোধে সানজিদা
কোক ভেবে
ফেন্সিডিল পান করে। তখন বেশ
ঘুম ঘুম
লাগছিল। শরীরটা
ঝিমিয়ে আসছিল।
সে কোনমতে
বাড়ি ফিরলেও
পরিবারের কেউ
বিষয়টি আচ
করতে পারেনি।
মূলত সে
দিন থেকেই
মাদকের জগতে
প্রবেশ করে
সানজিদা। এরপর
থেকে প্রায়ই
বাড়ি থেকে
টাকা চুরি
এবং বন্ধুদের
কাছ থেকে
ধার করে
চলে তার
মাদক সেবন।
প্রয়োজনে একটা
ইয়াবা ট্যাবলেটের
জন্য নিজের
দেহটাকেও বিলিন
করতে দ্বিধা
করেনি মেয়েটি।
সূত্র জানায়, ধীরে
ধীরে ইসমি,
সানজিদা-মিমদের
প্ররোচনায় বিদ্যালয়ের অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা
হরহামেশাই জড়িয়ে পড়ে মাদক সেবনে।
বিদ্যালয়ের ছাত্রী বিশ্রামাগারেই তারা দলবদ্ধভাবে
মাদক সেবন
করতো। এসব
ছাত্র-ছাত্রীদের
কাছে মাদক
বিক্রি করে
স্থানীয় মাদক
ব্যবসায়ী মুক্তার,
মো. আলম
মোল্লা, আরিফুল
ইসলাম, মো.
মিজান, শরিয়ত,
হায়দার, ওসমানসহ
আরো কয়েকজন।
টানা চার
বছরে ওই
বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির
মাদকসেবী ছাত্রীর
সংখ্যা দাঁড়িয়েছে
৩০জনে এবং
আসক্ত ছাত্র
প্রায় ৫০জন।
বর্তমানে ওই
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মাহিয়া
মিমের নেতৃত্বে
অন্তত ৩০জন
ছাত্রী অদ্যাবদি
নাজিরপুর উচ্চ
বিদ্যালয়ের ছাত্রী বিশ্রামাগারে ক্লাস শেষে
অথবা ছুটির
পরে মাদক
সেবন করে।
সানজিদার মতে,
আশাপাশের বেশ
কয়েকটি স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী আশক্সক্ষাজনক
হারে মাদকাসক্ত
হয়ে পড়েছে।
নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক
বলেন, ইসমি
নামের ওই
ছাত্রী গত
বছর তার
বিদ্যালয় থেকে
এসএসসি পাস
করেছে। সে
থাকাকালীন সময়ে অভিযোগ উঠেছিল কিন্তু
সত্যতা পাওয়া
যায়নি। তবে
এলাকার কিছু
বখাটে ছেলেরা
রাতের বেলা
বিদ্যালয়ের ছাদে মাদক সেবন করতো।
তার বিদ্যালয়ের
কোন ছাত্র-ছাত্রী মাদক
সেবনের সাথে
জড়িত নয়।
বিদ্যলয় পরিচালনা কমিটির
সভাপতি মো.
শাখাওয়াত হোসেন
বলেন, বিষয়টি
তার জানা
নেই। অচিরেই
তদন্ত করে
জড়িতদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেওয়া
হবে।
ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন
ছাত্রী নাম
প্রকাশ না
করার
শর্তে জানায়, সানজিদা-মিমসহ অনেক
ছাত্রীকে তারা
প্রায়ই ওই
বিশ্রামাগারে দরজা বন্ধ করে থাকতে
দেখে। অনেকেই
জানে সেখানে
মিমদের একটি
দল নিয়মিত
মাদকদ্রব্য সেবন করে। তাদের দেখা
দেখি প্রতিনিয়ত
অন্য ছাত্রীরাও
মাদকে আসক্ত
হচ্ছে।
গুরুদাসপুর মাধ্যমিক শিক্ষা
কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন,
বিদ্যালয়ের ছাত্রী বিশ্রামাগারে মাদক সেবনের
বিষয়টি খুব
ভয়াবহ। এ
বিষয়টি নিয়ে
তার কিছু
জানানেই। এখন-ই বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক,
পরিচালনা কমিটির
সভাপতিসহ শিক্ষকদের
নিয়ে জরুরী
ভিত্তিতে ব্যবস্থা
গ্রহন করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
মোছা. ইয়াছমিন
আক্তার বলেন,
বিদ্যালয়ের ছাত্রী বিশ্রমাগারে ছাত্রীদের মাদকাসক্তের
ব্যাপারে তিনি
কিছু জানেন
না।
তবে বিষয়টি নিয়ে এখনি ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে,-ভারতীয় সীমান্ত
পার হয়ে
নাটোরের লালপুর,
পাবনার ঈশ্বরদী,
রাজশাহীর বাঘা,
চারঘাট, গুদাগাড়ী,
মহিষালবাড়ি ও চাপাঁইয়ের শিবগঞ্জ হয়ে
মটর সাইকেল,
বাস, ট্রাক,
কাভার্ডভ্যান, এ্যাম্বুলেন্স নছিমন, ভুটভুটিতে মালামালের
ভেতর ও
মানুষের শরীরে
বিশেষ কায়দায়
মাদক বহন
করা হয়।
সেসব মাদক
বড়াইগ্রামের মৌখাড়া, নাটোরের দত্তপাড়া হয়ে
নাজিপুরে পোঁছে
দেওয়া হয়।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)
দিলীপ কুমার
দাস বলেন,
মাদক বিরোধী
অভিযানা অব্যাহত
রয়েছে।

Post a Comment