Halloween Costume ideas 2015

স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মধ্যে কেউ খোজ নেয়নি: একাত্তরের শহিদ সৈয়দ আলী মুন্সীর ছেলে ৬৫ বয়সেও কুলির কাজ করেন!


মোঃ কামাল হোসেন: ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদের একজন ছাতনী পূর্বপাড়ার (বনবেলঘরিয়া উত্তর পাড়ার সীমান্তবর্তী এলাকা) সৈয়দ আলী মুন্সী। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মত টুপি মারকিন কাপড়ের পোষাক পরিধান করতেন এবং যেখানেই জনসভা হত সেখানেই ছুটে যেতেন। আওয়ামী লীগের নিবেদিত এই কর্মী  ১৯৬০ সালে ছাতনী পূর্বপাড়ার একমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাতনী পূর্বপাড়া জামে মসজিদ নিজে জমি প্রদান করে প্রতিষ্ঠা করেন। আর ১৯৭১ সালে বিহারি সহ পাকিস্তানি ঘাতকরা তার প্রতিষ্ঠিত মসজিদে এবাদতরত অবস্থায় থেকে ধরে নিয়ে ড্যাগার দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। সৈয়দ আলী মুন্সীর এই হত্যাকা-ের কাহিনী বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র ৮ম -ের ৪০৯-৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে এইভাবে- “আবুল কালাম বললেন স্বাধীনতা সংগ্রামের দুমাস পর্যন্ত আমরা এদিক সেদিক পালিয়ে ভালোই ছিলাম। হিন্দুদের আমরা পাহারা দিয়ে রাখতাম, কিন্তু এর মধ্যেও আমাদের অনেকবার লাঠিসোটা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হতো, কখন হয়ত নরপিশাচ অবাঙালী জল্লাদের দল গ্রামে ঢুকে পড়ে। তাদের তিনবার যুদ্ধ করতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়। বিংশ শতকে হালাকুর বংশধররা তিনদিন পর সশস্ত্র ভাবে ছাতনী গ্রামকে আক্রমন করতে আসে। গ্রামের মানুষ একত্রে খোদার নাম নিয়ে লাঠিসোটা নিয়ে দলে দলে তাদের তাড়া করে, হানাদার বাহিনী বিভ্রান্ত হয়েছে ঘটনা দেখে। তারা পিছু হঠেছে।
কিন্তু অবাঙালী পাকিস্তানি অসামরিক নাগরিকদের দ্বিতীয় পিতা, ধর্মের কুলাঙ্গার জল্লাদ হাফেজ আব্দুর রহমান এই পরাজয়কে অপমান মনে করলো। তাই প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছা প্রবল হলো তার। খুনের নেশাখোর এই জল্লাদ তাই পথ খুঁজতে চেষ্টা করেছে সর্বক্ষণ। আবার হেটেছে সেই পথে। বনবেলঘরিয়ার মসজিদ থেকে টেনে বের করলো ১০৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ সমর্থক বৃদ্ধ সৈয়দ আলী মুন্সিকে। ঘটনা ঘটলো ১৫ই জ্যেষ্ঠ। সৈয়দ আলী মুন্সীর লাশ দেখলো ছাতনীর মানুষ। ওরা কাঁদলো।
তাছাড়া ছাতনী স্মৃতি সৌধে সৈয়দ আলী মুন্সীর নাম ২০ নাম্বারে রয়েছে।
আর সেই সৈয়দ আলী মুন্সীর ৬৫ বছর বয়সী পুত্র আবুল কালাম আজাদ (আবু) এখন নাটোর স্টেশন বাজার কাঁচামালের আড়তে কুলির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ২৯ মার্চ বুধবার সকালে সরেজমিনে নাটোর স্টেশন বাজার কাঁচামালের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, সাদা চুল-দাড়ির একজন বৃদ্ধ (আবু) পিঠের উপর বস্তা নিয়ে চলেছেন। ৬৫ বয়স বয়সী শহিদ পুত্র আবুর এইরকম বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, তাই নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ, মনে হচ্ছিল সৈয়দ আলী মুন্সীর উপর আঘাতকারি একাত্তরের ঘাতকদের ছোরার আঘাতে বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে মনে হচ্ছিল বুকের ভিতর রক্তক্ষরণ হয়ে ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে লজ্জিত হচ্ছিলাম, যাদের রক্তের বিনিময়ে আজ স্বাধীন এই দেশ, সেই দেশে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে একজন শহিদ পুত্র ৬৫ বছর বয়সী সাদা চুল-দাড়ির বৃদ্ধ আড়তে বস্তা টানছেন দুমুটো ভাতের জন্য। তবে কি স্বাধীনতার ৪৭ বছরে দেশ এগিয়ে যায়নি? জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন, স্বাধীনতার সুফল শহিদ পুত্র আবু কেন পাননি?
এব্যাপারে ছাতনী ইউনিয়নের নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিন উল্লাহ বলেন, সৈয়দ আলী মুন্সী আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। তাই তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের টার্গেটে পড়েন শহিদ হন।
এব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা হোসেন মোল্লা বলেন, একজন শহিদ পরিবারের সদস্য ৬৫ বছর বয়সে কুলির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন, বিষয়টি দুঃখজনক।

নাটোর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার, নুরুল ইসলাম মাষ্টার বলেন, আমি তাকে বয়স্ক ভাতা কার্ড করে দিয়েছি। নাটোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার আব্দুর রউফ সরকার বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য বৃদ্ধ শহিদ পরিবারকে সাহায্য করা মত ব্যবস্থা নেই। তবে তিনি সরকারের কাছে আবেদন করলে আমরা তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।

Post a Comment

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget