সজল কুমার হোড়,
গুরুদাসপুর: ভোর সাড়ে পাঁচটা। ঘনকুয়াশায়
আচ্ছ্বন্ন প্রকৃতিতে শীতের আবেশ। ভোরের
আলো ফুটতে
তখনো বেশ
বাকি। বাস-ট্রাকগুলো চলছে
বাতি জ্বালিয়ে।
তবুও জীবিকার
তাগিদে হাতে
কাস্তে, কোদাল
আর ধান
বহনের বাক
নিয়ে জড়ো
হয়েছে কয়েক
হাজার শ্রমিক।
এদের মধ্যে চলনবিলে
বসবাসরত আদিবাসী
নারী-শিশু
ও পুরুষ
রয়েছে। ‘বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে’র নাটোরের
গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের নয়াবাজার
হাটের প্রতিদিনের
দৃশ্য এটি।
দক্ষিণ চলনবিলের নাটোরের
গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও পাবনার চাটমোহর
উপজেলায় বিনাহালে
রসুন রোপন
আর আমনধান
কাটার উৎসবকে
ঘিরে হাজারো
শ্রমিকদের এই জটলা (শ্রমিকের হাট)।
কৃষি অধিদপ্তর ও
স্থানীয় কৃষকদের
সাথে কথাবলে
জানাগেছে, চলনবিলের পানি এখন ভাটির
টান। জেগে
উঠছে আবাদী
জমি। দক্ষিণ
চলনবিলের ৭০
হাজার হেক্টর
জমিতে চলছে
ধান কাটার
উৎসব। ধান
কাটার পর
নরম-কর্দমাযুক্ত
পলিমাটিতে ৩০ হাজার ৯শ ৬ হেক্টর জমিতে
বিনাহালে রসুন
রোপনের কাজ
শুরু হয়েছে।
এসব কাজে
অনেক শ্রমিকের
দরকার হয়।
চলনবিলের নিচু
এলাকার শ্রমিক
এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির শ্রমিকরাই
এই শ্রেিমকর
হাটে আসে।
সোমবার নয়াবাজেরর শ্রমিকের
হাটে গিয়ে
জানাগেল, গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম ছাড়াও
তাড়াশ, সলঙ্গা
ও উল্লাহপাড়া
বগুড়া শেরপুর
উপজেলা এলাকার
শ্রমিকরা দল
বেঁধে এখানে
জমায়েত হয়।
এসব শ্রমিকদের
সবাই এসেছে
ট্রাক-বাসের
ছাদে, নছিমন
কিংবা অটোভ্যানে।
সকলের গায়েই
রয়েছে শীতের
পোষাক, হাতে
কাস্তে, কোদাল
ও ধান
বহনের জন্য
বাক। পাশ
দিয়েই সাইঁ
সাইঁ করে
চলছে বাস-ট্রাক। গেরস্থ
(কৃষক) দেখলেই-
শ্রমিকদের প্রশ্ন ‘কয়ড্যা লাগবি’ (কয়জন
শ্রমিক লাগবে)। কৃষক
তাদের চাহিদামত
শ্রমিক দরদাম
মিটিয়্ েসরাসরি
নিয়ে যাচ্ছেন
মাঠে।
মজিবুর রহমানসহ পাঁচজন
কৃষকের সাথে
কথাবলে জানাগেছে,
ধান কাটা,
বিনাহালে রসুন
রোপন, সেখানে
লারা (ধানের
খড়) বিছানো
ও ধানকাটাসহ
জমি তৈরির
কাজ করানো
হয় এসব
শ্রমিক দিয়ে।
নভেম্বরের শুরু থেকে ডিসেম্বরের শেষ
সপ্তাহ পর্যন্ত
চলে শ্রমিকদের
এই হাট।
ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের
(ইউপি) চেয়ারম্যান
আব্দুল মতিন
জানালেন, শুধু
নয়াবাজার নয়-
বনপাড়া-হাটিকুমরুল
মহাসড়ক ঘেঁষে
মশিন্দা ইউনিয়নের
হাসমারী ও
বড়াইগ্রামের মানিকপুর পয়েন্টে এরকম শ্রমিকের
হাট বসছে
প্রায় দশ
বছর ধরে।
তাঁর তথ্যমতে,
দক্ষিণ চলনবিলের
পানি সবার
আগে নামে।
ধান কাটা
আর বিনা
হালে রসুন
আবাদকে ঘিরে
এই শ্রমিকের
হাট বসছে।
শ্রমিকদের সাথে কথাবলে
জানাগেল, তারা
ছয় থেকে
২০জনে দলভুক্ত
হয়ে আসে
শ্রম বাজারে।
কৃষকের চাহিদার
প্রেক্ষিতে তারা বিভক্ত হয়ে মাঠে
কাজ করে।
কাজ শেষে
দলবদ্ধ হয়ে
বাড়ি ফেরেন।
আবার দূরের
শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়
কৃষকের বাড়িতেই।
তাড়াশের বস্তুুল গ্রাম
থেকে এসেছে
শত শত
ওরাঁও সম্প্রদায়ের
নারী-পুরুষ।
এদের দল
নেতার নাম
জোসনা ওরাঁও।
রয়েছে কলেজ
পড়–য়া
রাখীটক্ক (১৭)। জোসনা ওরাঁও
জানান, তাদের
এলাকা অপেক্ষাকৃত
নিচু। এখানে
ইরি-বোরো
আবাদ ছাড়া
কাজ নেই।
অলস বসে
না থেকে
এখানে এসেছেন।
রসুন রোপন,
ধানকাটাসহ সকল কাজই তারা করে
থাকেন। নিজের
খেয়ে জনপ্রতি
মজুরিপান ২০০
টাকা। কলেজ
ছাত্রী রাখীটক্কির
মতে, তারা
নিজের খেয়ে
মজুরিপান ২০০
টাকা। অথচ
অন্য সম্প্রদায়ের
পুরুষ মহিলারা
কৃষকের খেয়ে
একই মজুরি
পেয়ে থাকেন।
আবার পুরুষ
শ্রমিকরা ৩০০
টাকা করে
মুজুরী পান।
এ বৈষম্য
থাকা ঠিক
নয়।
উল্লাহপাড়ার সাইলজানি গ্রাম
থেকে আসা
মমতা বেগম
ও গোলেজা
বেওয়ার নেতৃত্বে
এসেছে ২০জনের
একটি দল।
প্রত্যককে ভাড়া গুনতে হয়েছে ১০
টাকা করে।
রসুন রোপনের
কাজ করেন
তারা। এজন্য
মজুরি পান
২০০ টাকা।
তবে সকালে
ও দুপুরে
খাবার দেন
জমির মালিক।
এলাকায় কাজ
না থাকায়
তারা এখানে
এসেছেন।
একই তথ্য জানালেন,
তাড়াশের নওগাঁ
থেকে আসা
আয়শা বেগম
(৪৫)।
তাঁরভাষ্য, স্বামী মিন্টু প্রামানিক সড়ক
দূর্ঘটনায় পঙ্গু। এক ছেলে এবং
মেয়ে নিয়ে
সংসার। জীবনের
প্রয়োজনে তিনি
শ্রমিক দলে
যোগ দিয়েছেন।
মজুরির টাকাতেই
চলে তার
সংসার।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি
কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন,
উপজেলায় আট
হাজার হেক্টরসহ
পাশের বড়াইগ্রাম
ও চাটমোহর
উপজেলাতে অনুরুপ
পরিমান বিনাহালে
রসুন আবাদ
হয়। এসব
আবাদকে ঘিরে
বিভিন্ন উপজেলা
এলাকা থেকে
শ্রমিকরা এখানে
হাজির হয়।
অপেক্ষাকৃত মজুরিও তারা বেশি পেয়ে
থাকেন।

Post a Comment