Halloween Costume ideas 2015

নাটোরে বাফা গুদামে ধারণ ক্ষমতার ৪ গুণ বেশী সার মজুদ: চায়না ইউরিয়া সার নিয়ে বিপাকে



নবীউর রহমান পিপলু, বিশেষ প্রতিনিধি: নাটোরে বাফা গুদামে ধারন ক্ষমতার চারগুন বেশী সার মজুদ পড়ে রয়েছে। ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত হওয়ায় সিংহভাগ সার খোলা আকাশের নিচে মজুদ রাখায় বেশ কিছু সার নষ্ট হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে এসব নষ্ট জমাট বাধা সার লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নরম করে ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করে প্রতারণা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী ডিলাররা বাফা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশে কারখানা থেকে বাফা গুদামে নেওয়ার সময় তাদের বরাদ্দের অংশের ভাল দেশী সার নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নামিয়ে রাখছে। এক্ষেত্রে চায়না সার নিচ্ছেন না তারা। এজন্য চায়না সারগুলো বাফা গুদামে মজুদ থাকছে। ডিলারদের কেউ কেউ এমন অভিযোগকে মিথ্যাচার বলে দাবী করেছেন।
অপরদিকে  বাফা কর্তৃপক্ষ সার নষ্ট হওয়া সহ এসব  অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবী করলেও  চায়না থেকে আমদানি করা ইউরিয়া সার ঠান্ডায় জমাট বেধে যাচ্ছে বলে জানান। এসব সার ক্রয়ে ডিলার কৃষকদের আগ্রহ কম দেখায়। তারা চায়না থেকে আমদানি করা সার নিতে আগ্রহ দেখায় না। তাদের কাছে দেশী ইউরিয়া ডিএপি সারের চাহিদা বেশী।  ফলে চায়না সার অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। নাটোর বাফা গুদামে স্থানাভাবে মজুদ সারের ৩২ ভাগ খোলা আকাশের নিচে মজুদ রাখায় ঠান্ডা আবহাওয়া ঝড় বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে ধারন ক্ষমতার গুন সার মজুদ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও সার নষ্ট হওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী বাফা কর্তৃপক্ষের।  তবে বোরো মৌসুম শুরু হলে এসব সার মজুদ থাকবে বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, হাজার মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন নাটোর বাফা গুদামে বর্তমানে সার মজুদ রয়েছে ৩৫ হাজার ৪২৫ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন। যা ধারন ক্ষমতার ৪গুন বেশী। এই সারের অর্ধেক চীন থেকে আমদানিকৃত চায়না ইউরিয়া সার। প্রতি বছর বিভিন্ন আবাদ মৌসুমে ইউরিয়া, টিএসপি ডিএপি সারের চাহিদা ধরা রয়েছে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মাছ চাষেও ব্যবহৃত হয় ইউরিয়া। এসব সার জেলার ৭৭ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। কিন্তু গত কয়েক মৌসুম ধরে কৃষকরা ইউরিয়া সারের চেয়ে ডিএপি সারের দিকে বেশী ঝুকেছে। ফলে অধিকাংশ সময়েই বাফা গুদামের সার মজুদ পড়ে থাকে। তবে বোরো রবি মৌসুমে সারের চাহিদা বেশী হয়। তখন গুদামে সার মজুদ থাকেনা বলে জানান বাফা গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে চলতি নভেম্বর মাস পর্যন্ত মজুদ সারের মধ্যে বেশ কিছু সার জমাট বেধে নষ্ট হয়ে গেছে। ওই জমাট বাধা নষ্ট সার মগুুর পেটা করে নরম করার পর ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় একটি সুত্র জানায়, খোলা আকাশের নিচে মজুদ রাখার কারনে অন্তত ৫০০ বস্তা সার নষ্ট হয়। এসব সারের সিংহভাগ চায়না সার। পরে এসব সার ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করে প্রতারণা করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, চায়না ইউরিয়া সার দেশীয় সারের মত কাজ কওে না। / দিন মজুদ রাখলেই চায়নার ওই সার জমাট বেধে যায়। ফলে দেশী সারের মত উপকারে আসেনা। ডিলাররা দেশী ইউরিয়া সারের সাথে চায়না সার নিতে বাধ্য করে। বর্তমানে তারা ডিএপি সার ব্যবহারের স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। ফলনও ভাল হয়। হালতি গ্রামের জমির আলী জানান, গত মৌসুমে তাকে দেশীয় ইউরিয়া সারের সাথে চায়না ইউরিয়া সার দেওয়া হয়। দিন পর চায়না সার গুলো জমাট বেধে যায়। দলা দলা হয়ে যাওয়া এই সার তেমন কাজে আসেনি। তাই তারা চায়না সার থেকে দুরে থাকছেন।
অবশ্য স্থানীয় কৃষি বিভাগ চায়না সারের অপকার্যকারিতা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাদের মতে সব ইউরিয়া সারে এ্কই কাজ। জমাট বাধা সারে গুনাগুন কম বলে তারা জানেন না। এবিষয়ে জানতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক প্রশিক্ষন কর্মকর্তা মোঃ মঞ্জুরুল হুদা জানান, জমাট বাধা  চায়না সার নিয়ে কৃষকরা প্রতারিত হয়েছে এমন অভিযোগ তারা জানেন না। আর গুদামে সারের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও সরবরাহ বিতরন যথা নিয়মে হচ্ছে বলেই তারা জানেন। চাহিদা অনুযায়ী ডিলাররা সার উত্তোলন করছেন। তিনি জানান, পুর্বের মজুদ ছিল হাজার ৯২৯ মেট্রিক টনসহ গত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত জেলায় সারের চাহিদা ছিল ১৯ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন। এসব সারের প্রায় সবই বিতরণ হয়েছে। চায়না সারের প্রতি কৃষকদের অনাগ্রহের বিষয়টি তার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিবেন বলে জানান।

নাটোর বাফার গোডাউনের ডিপো ইনচার্জ আব্দুল গাফফার ধারন ক্ষমতার গুন সার মজুদের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ম্যানেজমেন্ট দক্ষতার সাথে সারগুলো সংরক্ষন করছে। সার সঠিক মানে রাখতে সংরক্ষণের সকল ব্যবস্থা নিয়ে সংরক্ষণ করছে। ঝড়-বৃষ্টিতে সার যাতে নষ্ট বা গলে না যায় সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোন সার নষ্ট হয়নি। তবে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে চায়না সার জমাট বাধলেও গুনাগুন নষ্ট হয়না। চাষী বা ডিলারদের কেউ  এবিষয়ে কোন অভিযোগ করেননি। এছাড়া ডিপো বা কারখানা থেকে বাফা গুদামে আসার আগে পথে কোন ডিলারের প্রতিষ্ঠানে সার নামিয়ে রাখার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন তিনি।

Post a Comment

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget