নবীউর রহমান পিপলু:
একশ’ চার
বছর আগে
রাজা রমণীকান্ত
রায় মাটি
দিয়ে একটি
স্কুল ঘর
তৈরী করে
দিয়েছিলেন। টিনের চালার এই স্কুল
ঘরের বৈশিষ্ট
কোন জানালা
নেই। ঘরের
দু’পাড়েই
রয়েছে দরজা
ও বারান্দা।
মোট ৪৮
টি দরজা
রয়েছে মাটির
তৈরী শতবর্ষী
এই স্কুল
ঘরে। এখন
সেই রাজাও
নেই , নেই
জমিদারী প্রথা।
তবে ওই
স্কুল ঘরটি
এখনও পাঁজর
সোজা করে
দাড়িঁয়ে থেকে
প্রাচীন স্থাপত্যের
নিদর্শন জানান
দিয়ে যাচ্ছে।
নাটোরের সিংড়া
উপজেলার চৌগ্রাম
জমিদার বাড়ি
সংলগ্ন স্কুলটিতে
এখনও ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারনায়
মুখরিত হয়ে
থাকে। নিভৃত
পল্লী এলাকার
শতবর্ষী এই চৌগ্রাম
হাইস্কুলের ইতিহাস যেমন সমৃদ্ধ তেমনি
বৃহৎ শিক্ষিত
জনগোষ্ঠির কিয়দংশ তৈরীর কাজে প্রশংসনীয়
ভুমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশের অনেক প্রথিতযশা গুনী
ব্যক্তিত্ব গ্রাম ভিত্তিক এই স্কুল
থেকে শিক্ষাজীবন
শুরু করেন।
যাদের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাদার
বখশ। আনবিক
শক্তি কমিশনের
সাবেক চেয়ারম্যান
হানিফ তালুকদার,
রাজউকের সাবেক
চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রহমতুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সাবেক চেয়ারম্যান
(গণিত) রমজান
আলী সরদার,
রাজশাহী জেলা
বোর্ডের সাবেক
সচিব আব্দুল
জব্বার, শিক্ষা
মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব ফয়েজ উদ্দিন
আহমেদ,বিমান
বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত
ক্যাপ্টেন মীর গোলাম সবুর,স্বর্ন
পদকপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: জাহেদুল
ইসলাম সহ
দেশের বিভিন্ন
বিভাগ ও
দপ্তরের অন্তত
অর্ধশতাধিক গুণিব্যক্তি এই স্কুলের ছাত্র
ছিলেন।
জনশ্রুতি আছে চৌগ্রাম
পরগনার প্রথম
রাজা ছিলেন
রাজা রসিক
রায়। দ্বিতীয়
রাজা তার
পুত্র কৃষ্ণকান্ত
রায়,তৃতীয়
রাজা পুত্র
রুদ্র কান্ত,চতুর্থ রাজা
তার দত্তক
পুত্র রোহিনী
রায় বাহাদুর
এবং পঞ্চম
রাজা দত্তক
পুত্র রমণীকান্ত
রায় বাহাদুর। রাজা রোহিনী কান্ত
পর্যন্ত সবাই
ছিলেন অত্যাচারী।
প্রজাদের মঙ্গলের
জন্য কোন
কাজ তারা
করতেননা। রাজা
রমণী কান্ত
হিন্দু-মুসলিম
প্রজাদের ছেলে
মেয়েদের জন্য
নির্মান করেন
এই চৌগ্রাম
স্কুল। ১৯০৩
থেকে ১৯১০
সালের মধ্যে
এই স্কুলটি
নির্মান করেন।
পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে স্কুলটি তৎকালীন
কলিকাতা বোর্ডের
কাছে থেকে
স্বীকৃতি পায়
স্কুলটি। যা
এখন চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড
কলেজ নামে
পরিচিত।
স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা
জানায়, স্কুলের
জন্য পাকা
ভবন থাকলেও
তারা মাটির
ঘরেই পাঠদানে
ও ক্লাস
করে স্বচ্ছন্দ
বোধ করেন।
এছাড়া প্রাচীন
ঐতিহ্য মনে
রেখে মাটির
ঘরে ক্লাস
করতে বেশী
আগ্রহী হয়
তারা।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী
নীলা খাতুন
ও সোহেল
রানা জানায়,তারা মাটির
ঘরে বসে
ক্লাস করতে
আনন্দ পায়।
মাটির ঘরে
বসলে প্রাচীন
কালের ইতিহাস
ও ঐতিহ্য
সম্পর্কে বেশী
আলোচনা হয়।
এই মাটির
স্কুল নিয়ে
তারা গর্ববোধ
করে থাকে।
সহকারী শিক্ষক ইসরাত
মোরসালিন জানান,
স্কুলটি মাটির
তৈরী হলেও
প্রাচীন ঐতিহ্য
নিয়ে গর্ববোধ
করেন। তবে
স্কুলটি ১০৪
বছর আগে
নির্মিত হলেও
এখনও জাতীয়
করন করা
হয়নি। এটিই
তাদের দুঃখ।
সহকারি প্রধান শিক্ষক এরশাদুল ইসলাম জানান,স্কুলটি নিমার্নের একশ” বছর পেরিয়ে গেলেও কোন সংস্কার করা হয়নি। মাটির তৈরী স্কুল ঘর এখনও মজবুত রয়েছে। স্কুলটিতে জানালা না থাকলেও উভয় পার্শে বারান্দা ও দরজা রয়েছে। মোট ৪৮টি দরজা রয়েছে। প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে বেশ কয়েকটি ক্লাস মাটির ঘরেই নেওয়া হয়। স্কুলটি কলেজ হিসেবে চালু হলেও শিক্ষার্থীরা এই মাটির ঘরেই ক্লাস করতে বেশী আগ্রহ দেখায়। শিক্ষকদেরও আগ্রহের কমতি নেই।

Post a Comment