আতোয়ার হোসেন
কর্মসংস্থানে নানান ক্ষেত্রের
মধ্যে টেলিভিশন
অফিস এখন
একটি গুরুত্বপূর্ণ
নাম। এখানে
বিভিন্ন দক্ষতার
লোকের সমাহার
থাকে। অনুষ্ঠান
পরিচালন, হিসাবরক্ষণ,
ব্যবস্থাপনা, রিপোর্টিং, সংবাদ সম্পাদনা, ভিডিও
সম্পাদনা, অ্যাঙ্করিং ও সম্প্রচার মিলিয়ে
কয়েকশ ব্যক্তির
প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ জরুরী হওয়ায় কর্মসংস্থানের
পরিসরটা বেশ
বড়। তার
মধ্যে খোদ
ক্যামেরা চালানো
লোকের সংখ্যা
ও তাদের
বিষয়াদি আমার
কাছে বিশেষ
ভাবনার জায়গা
করে নিয়েছে।
বিশেষ করে
যারা সংবাদ
সংগ্রহের কাজ
করে, তাদের
নিয়ে প্রচুর
আলোচনার চাহিদা
আছে বলে
আমি মনে
করি। প্রসঙ্গত,
আমি নিজে
এই পেশারই
মানুষ।
টেলিভিশনে ক্যামেরার সাথে
কর্ম করে
খাওয়ার লোকের
সংখ্যা আজ
নেহায়েত কম
নয়। প্রতিটি
টিভি-স্টেশনে
কমপক্ষে ৪০
জন লোক
শুধু ক্যামেরা
চালানোর কাজই
করে থাকে।
স্টেশনের চরিত্র
অনুযায়ী এই
সংখ্যা আরও
বেড়ে থাকে।
মোটের উপরে
বলা যেতে
পারে, সহ¯্রাধিক ব্যক্তি
এই পেশার
সাথে জড়িত।
এর প্রায়
অর্ধেক কেবল
সংবাদের চিত্র
ধারণের জন্য
নিয়োজিত থাকে।
এই পরিসংখ্যান
কেবল রাজধানী
ঢাকার। সারা
দেশের সংখ্যাও
¯্রফে কম
নয়। সংবাদ
ভিত্তিক কিছু
টেলিভিশন বর্তমানে
পাইপলাইনে থাকায় ধরেই নেওয়া যায়
যে, প্রায়
শতাধিক লোক
শীঘ্রই এই
পেশায় ঢুকতে
যাচ্ছে।
বাংলাদেশে যারা সংবাদের
চিত্র ধারণ
করে থাকে,
তাদের পেশাগত
পরিচয়ের ভিন্নতা
দেখা যায়।
তারা কাগজে-কলমে অধিকাংশ
স্টেশনে ক্যামেরাম্যান
(জুনিয়র ক্যামেরাম্যান/ক্যামেরাম্যান/সিনিয়র
ক্যামেরাম্যান) এবং কোথাও কোথাও ভিডিওজার্নালিস্ট
বলে অভিহিত
হয়ে থাকে।
তবে, আজকাল
ক্যামেরাম্যান শব্দের বদলে মৌখিকভাবে ক্যামেরা
পার্সন কথাটিকে
ব্যবহারের প্রচলন ও দাবি প্রত্যক্ষ
করা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট পেশার লোকদের নাকি তাতে
খানিকটা ইজ্জতবৃদ্ধি
ঘটে। এটাকে
অবশ্য আমি
¯্রফে বাজারসংস্কৃতি
বলে মনে
করি। এই
দুই নামের
অদল-বদলে
আমার কিছু
কমে বা
বাড়ে বলে
মনে হয়
না। এ-ও বুঝি
যে, কর্পোরেট
পলিসি আমাকে
যে নামে
ডাকবে তা
প্রতিষ্ঠাও পাবে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি ক্যামেরা
শব্দটির সাথে
ম্যান ও
পার্সন কোনোটার
ব্যবহারেই খুশি নই। শব্দগত পরিচয়ে
আমার আপত্তির
কারণও ভিন্ন
বলে মনে
করি। যারা
কেবল সংবাদেই
কাজ করে
তাদের জন্য
অন্য কোনও
নাম-পরিচায়ক
আমার ভাবনায়
গুঁতোগুতি করে। কারণ ক্যামেরাম্যান শব্দটি
আমার পেশার
সঠিক পরিচয়
দিতে পারে
না।
ক্যামেরা দিয়ে কেউ
স্থিরচিত্র (ফটো) ধারণ করলে তাকে
আমরা ফটোগ্রাফার
বলছি। সেই
কাজটাই যদি
কেউ কোনও
সংবাদের প্রয়োজনে
করে থাকে,
তখন তাকেই
বলছি ফটোসাংবাদিক।
বিষয়টা আমার
কাছে ভালো
লাগে। হয়তো
এরচেয়ে আরও
ভালো পরিচয়
থাকতে পারে।
তবুও ব্যাপারটাকে
আমার ভালো
লাগে। আবার
ক্যামেরা দিয়ে
কেউ চলচ্চিত্র
(ভিডিও) ধারণ
করলে আমরা
তাকে ক্যামেরাম্যান
বলতে শিখেছি।
ক্যামেরাম্যান নাটকের ভিডিও করে, সিনেমার
কাজ করে,
বিয়ে ও
মিউজিক ভিডিওর
কাজ করে
এবং সংবাদের
জন্যও ভিডিও
ধারণ করে।
তো, এর
মধ্যে সিনেমার
কাজ করা
ক্যামেরাম্যানকে সিনেমাটোগ্রাফার ও একাধিক লোকের
মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ,
অভিজ্ঞ এবং
অধিক দায়িত্বপূর্ণ
ব্যক্তিকে ডিওপি (ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি)
বলছি। তবে,
এক কথায়
সবাইকেই আমি
ক্যামেরাম্যান বলে চিনতে পারি।
এখন, আমি একটি
টেলিভিশনে কেবল সংবাদের চিত্র ধারণের
জন্য নিয়োজিত
একজন ব্যক্তি।
আমাকেও ক্যামেরাম্যান
বলেই ডাকা
হয়। তখন,
আমার পরিচিত
পরিম-লে
আমি একপ্রকার
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভূগি। সমাজ আমার
কাজ সম্পর্কে
কোনও ধারণা
করতে পারে
না বলে
মনে হয়।
আমাকে এইভাবে
বলতে হয়
যে, আমি
ক্যামেরাম্যান, নিউজে কাজ করি। এবং
শেষ কথাটি
আমি জোর
করে বলে
ফেললাম ভেবে
ইতস্তত বোধ
করি। একটি
সহজ পরিচয়ের
প্রত্যাশা করি, যা দিয়ে আমার
পেশাকে আমি
ঠিকভাবে
পেশ করতে পারি।
ক্যামেরাম্যান বা ক্যামেরা
পার্সন বলে
চিহ্নিত হতে
আমার কোনও
লজ্জা নেই।
সমস্যা একটাই;
আমার সঠিক
পরিচয় উত্থাপিত
হচ্ছে না।
ক্যামেরা হাতে
নিয়ে যতো
প্রকার কাজ
আছে তার
ঠিক কোনটা
আমি করি,
বোঝা যাচ্ছে
না। যদি
আরও খোলাসা
করে বলি,
সংবাদের ক্যামেরাচালককে
আমি অন্যান্যদের
থেকে মহিমান্বিত
মনে করছি
না। কাউকে
ছোটও করতে
চাইছি না।
কেবল বলতে
চাইছি যে,
বিয়ের ভিডিওকারী,
সিনেমাটোগ্রাফার, ডিওপিদের থেকে
আমার কাজ
ও কাজের
ক্ষেত্র ভিন্ন।
ফলে আমাকে
ভিন্ন কোনও
নামেই পরিচয়
করাতে হবে।
বাংলাদেশে টেলিভিশনে কাজ
করা সংবাদের
ক্যামেরাম্যানকে আমি ভিডিওসাংবাদিক (ভিডিও জার্নালিস্ট)
বা সম্প্রচার
সাংবাদিক (ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট) বলে চিহ্নিত
করার কথা
বলতে চাই।
দ্বিতীয়টিকে আমি অপেক্ষাকৃত বেশি পছন্দ
করছি। অথবা,
আরও ভেবে
এমন একটা
নাম নির্বাচন
করা যেতে
পারে, যা
দিয়ে তাদের
পরিচয়টা সহজ
হতে পারে।
দিনে দিনে
এই পেশার
লোকসংখ্যা যতো বাড়বে, বিষয়টি ততোই
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সময়োপযুক্ত ও
সম্মানসূচক নামকরণে পেশার মানোন্নয়ন ঘটে
বলে আমি
বিশ্বাস করি।

Post a Comment