Halloween Costume ideas 2015

প্রথম লেখার অনুভূতি


জাকির তালুকদার
লিখতে এসে দেখলাম, এমন এক শাস্ত্র যা শেখার কোনো ইস্কুল নেই। পাঠ্যপুস্তক রয়েছে অসংখ্য, তবে নিজে লেখার সময় সেই সব পাঠ্যপুস্তককে অনুসরণ করলে তা হবে চৌর্যবৃত্তি। শুধু ছোটগল্প লেখাই নয়, বরং সব ধরনের সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে এই একই কথা প্রযোজ্য। পূর্বজ, অগ্রজ, সমসাময়িকÑ সকলের কাজ সম্পর্কে জানতে হবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, কিন্তু যে কোনো জনকে অনুসরণ-অনুকরণ করলেই সৃজনশীলতার সর্বনাশ। এই জিনিসটি বুঝতে বুঝতেই কেটে গেছে বছরের পর বছর। তাই গল্প লেখার চেষ্টা অনেকদিন ধরে করে চললেও নিজের প্রথম গল্পটি লেখা হয়েছে অনেক পরে। নিজের লেখা মানে সেই লেখা যা একেবারে আমার নিজস্ব। এতখানি নিজস্ব যে, আমি না লিখলে কোনোদিনই আর লেখা হতো না গল্পটি।
আমি তখন চাকরিসূত্রে বসবাস করছি একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ে। সেটি আমাদের দেশের মঙ্গা এলাকার এমনই এক অজ পাড়া গাঁ যে সেখানে বিকালে অফিস সময় অর্থাৎ আউটডোরের রোগি দেখা শেষ হয়ে গেলে আর কথা বলার মতো কোনো লোক পাওয়া যায় না। সপ্তাহে সাড়ে পাঁচ দিন আমার এইভাবেই কাটে। দেড়দিন কাটে সপ্তাহান্তে বাড়িতে নিজের শহরে। শহরে জন্ম, শহরে বেড়ে ওঠা, শহরে লেখাপড়া করা এই আমার মধ্যে কিন্তু  অজ পাড়া গাঁয়ে থাকার জন্য কোনো অস্বস্তির খোঁচা ছিল না। আমি বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলের অপ্রতুল সম্পদের মধ্যে, বলা ভালো নিরতিশয় দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেও কীভাবে মানুষ নিজের মনুষ্যত্বকে ধরে রাখতে পারে, তা দেখে দেখে মুগ্ধ হচ্ছি প্রতিনিয়ত। মনে হচ্ছে এতদিনে একটু একটু শিক্ষিত হচ্ছি। যে দারিদ্র লক্ষ লক্ষ মানুষের গায়ে তাদের চামড়ার মতো অমোচনীয় হয়ে লেগে রয়েছে, সেই দারিদ্র্যকে অবলীলায় অস্বীকার করে সেই মানুষগুলো যখন চরম মানবিকতার পরিচয় দেয়, তখন আমি মাথা নোয়াই তাদের কাছে। তার মানে এই নয় যে তাদের মধ্যে খেয়োখেয়ি কম রয়েছে। খেয়োখেয়ি রয়েছে। তীব্রভাবেই রয়েছে। সেটাই থাকার কথা। কিন্তু সেই খেয়োখেয়িরত জানোয়ারদের মধ্য থেকে যখন মনুষ্যত্ব এত উজ্জ্বলভাবে বেরিয়ে আসে, তখন চোখ ঝলসে না গিয়ে পারে না। সেই সময়েই আমার নিজের উপলধ্বিÑ আমি গল্প লিখতে পারব। আমার নিজের মতো করে গল্প লিখতে পারব। এতদিন মনে হতো, অঅমি লিখবটা কী? সবই তো রবীন্দ্রনাথ-মানিক-তারাশঙ্কর-বিভূতি-ইলিয়াসরা লিখে বসে আছেন! কিন্তু সেখানেই প্রথম আমার মধ্যকারনির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গহবার মতো ঘটনাটি ঘটে।
লিখলামদাস পরম্পরাএবংসোলেমান পয়গম্বরের দেয়ালনামের দুইটি গল্প। দুটি গল্পই পর পর দুই সংখ্যায় ছাপা হলোনিসর্গপত্রিকায়। পত্রিকা হাতে নেবার সময় ভেতরে ভেতরে আবেগের একটি কম্পন অনুভব করছিলাম। হাতে লেখা কপি বার বার পড়েছি। কিন্তু ছাপা অক্ষরে লেখা নিজের গল্পের চেহারাটি বারংবার দেখেও যেন আশ মেটে না। অন্তত মাসখানেক যেখানি গেছি পত্রিকাটি সঙ্গে নিয়ে ঘুরেছি। অন্য কাউকে দেখাইনি। কিন্তু আমার সঙ্গে সঙ্গে রেখেছি। স্থানান্তরের সময় ব্যাগের মধ্যে, কাজ করার সময় টেবিলের ওপরে, আর রাতে ঘুমানোর সময় বিছানাতে নিজের শিথানে থেকেছে পত্রিকাটি। আর যখন পরিচিত কেউ গল্পটি ভালো লাগার কথা বলেছেন, তখন আনন্দের চাইতে কৃতজ্ঞতার বোধটিই বেশি কাজ করেছে। তারা আমার মতো নাম-না-জানা একজন লেখকের গল্প মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন! তখন কল্পনাও করতে পারিনি যে ভবিষ্যতেদাস পরম্পরাগল্পটি আরও অনেক জায়গাতে ছাপা হবে। ছাপা হবে রবিউল করিমেরনব্বই দশকের গল্পসংকলনে।নিসর্গপত্রিকাটি কলকাতায় যায়। সেখানেও কেউ কেউ কফি হাউসের আড্ডায়দাস পরম্পরাগল্পটির উল্লেখ করেছেন শুনে আপ্লুত হয়েছিলাম। বিশ্বাস করতেও একটু কষ্ট হচ্ছিল। তবে সেই অবিশ্বাস কেটে গেল সেদিন, যেদিন চিঠি পেলাম কলকাদার প্যাপিরাস প্রকাশনী থেকে গৌরাঙ্গ মুলের মাধ্যমে। তারা তিন -বাাংলাদেশের গল্পপ্রকাশ করছেন। সেখানে আমার এই গল্পটি ছাপতে চান। সেদিন আনন্দে চোখদুটো ভিজেও উঠেছিল হয়তো।  


Post a Comment

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget