Halloween Costume ideas 2015

মাওবাদীদের সাথে অরুন্ধতী রায়


রেজাউল করিম খান

নানা কারণেই কোনও কোনও দেশে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। এর পেছনে শোষণ, বঞ্চনা, নিপীড়ন প্রভৃতি ইতিহাস থাকে। জনগণের একটি অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সরকার একে বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসী, জঙ্গি প্রভৃতি নামে অভিহিত করে এবং নিষ্ঠুর হাতে তা দমনের চেষ্টা করে। তেমনই এক আন্দোলন ষাট দশকের শেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল নকশাল আন্দোলন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সেতুং-এর চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ একদল মানুষ চারু মজুমদারের নেতৃত্বে শ্রেণি শত্রু খতমের নামে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। বেশ দ্রুতই সেই অন্দোলন গ্রাম থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক তরুণ এতে যোগ দেন। এই আন্দোলন দমনের জন্য সরকার চরম পন্থা গ্রহণ করে। সরকারি বাহিনী হত্যা নির্যাতন চালিয়ে ১৯৭২ সালে নকশাল আন্দোলন দমন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এর রেশ রয়ে যায়।
কিছুকাল পরই নকশাল অর্থাৎ মাওবাদীরা আবার তৎপরতা শুরু করে। ভারতের ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, বিহার, উড়িষ্যা পশ্চিমবঙ্গে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তারা চায় ভারত সরকারের পতন। এই লক্ষ্যে চলছে সশস্ত্র লড়াই। বিগত কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মাওবাদীদেরকে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ হুমকি বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ভারতের অখন্ডতা রক্ষায় মাওবাদী দমনে সেনা, পুলিশ, বিএসএফ, কোবরা, স্কোরপিয়নসহ সকল সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়োজিত করা হয় অপারেশন গ্রীণহাটের অধীনে। মাওবাদীদেও অধিকাংশই পাহাড়ী, আদিবাসী। পাহাড়-জঙ্গলেই তাদেও বসবাস। আপাতদৃষ্টিতে তারা নিরিহ, নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। কিন্তু কেন তারা ভারতের বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার উচ্ছেদ চায়, কেন তারা বিদ্রোহ করলো, অস্ত্র হাতে তুলে নিল? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ভারতের প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায় গভীর জঙ্গলে গিয়ে মাওবাদীদেও সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ক্যাম্পে থেকেছেন। তাদের কথা শুনেছেন। রাষ্ট্র কিভাবে উন্নয়নের নামে বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে তাদেও শোষণ করছে, গ্রামবাসীকে উচ্ছেদেও জন্য গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। হত্যা, লুট নারী ধষণ করা হচ্ছে। ছত্তিশগড়, ঝাড়খ-, বিহার, উড়িষ্যা প্রভৃতি এলাকা খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ। খনি কোম্পানি বহুজাতিক কোম্পাগিুলোর কাছে এসব এলাকা স্বপ্নপুরী। কিন্তু ৬০ প্রায় হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় ভারত সরকারের কর্তৃত্ব খুবই কম। কোম্পানিগুলোর সহায়তায় সরকার এইসব এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। অরুন্ধতী রায় এসবই খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁর লেখার বাংলা অনুবাদ করেছেন মেহেদী হাসান। সেখান থেকে কিছু অংশ এখানে প্রকাশ করা হলো।
অরুন্ধতী রায় মাওবাদীদের সাক্ষাৎ পাবার বাসনা জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। একদিন সকালে দরজার নিচ দিয়ে প্রবেশ করানো একটি খাম পাওয়া গেল। খামের ভেতর সাদা কাগজে টাইপ করা একটি চিরকুট। তাকে ছত্তিশগড়ের দান্তেবড়ায় মা দান্তেশ্বরী মন্দিরে যেতে বলা হয়েছে। যাবার জন্য দুই দিনে চারটি সময় নিধারণ করা ছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, গাড়ির চাকা বারবার পাংচার হওয়া, অবরোধ, পরিবহন ধর্মঘট এসব মাথায় নিয়ে সেখানে যেতে হয়েছিল। চিরকুটে লেখা ছিল, সাথে ক্যামেরা, কপালে পরার জন্য লাল টিকা রাখতে। সাথে নারকেল থাকলে ভাল হয়। অভ্যর্থনাকারীর মাথায় টুপি, হাতে হিন্দিআউটলুকম্যাগাজিন থাকবে। সংকেতনমস্কার গুরুজি দান্তেবড়া একটি আজব শহর। সেখানে পুলিশ থাকে সাদা পোশাকে আর বিদ্রোহীরা ইউনিফর্ম পরা। জেল সুপার থাকে জেলে আর বন্দিরা থাকে বাইরে। ধর্ষিতা নারীরা থাকে পুলিশ হেফাজতে আর ধর্ষকরা বাজারে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ায়। ইন্দ্রাবতীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যেসব অঞ্চলে মাওবাদীদেও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাকে পুলিশপাকিস্তানহিসেবে আখ্যায়িত করে। সেখানে গ্রামগুলো মানুষশূন্য আর জঙ্গল মানুষ ভর্তি। যে শিশুদেও স্কুলে যাবার কথা, তারা জঙ্গলে দৌড়ায়।
ঊনের বিদ্রোহীরা খুবই বেপরোয়া। এদেও ঘিওে রয়েছে আধা সামরিক বাহিনী। যাদেও আছে আধুনিক অস্ত্র, পর্যাপ্ত অর্থ, গোলাবারুদ, গণমাধ্যম ভারতের উদীয়মান পরাশক্তি হয়ে ওঠার দম্ভ। অন্যদিকে এর বিপরীতে রয়েছে সাধারণ গ্রমবাসী। তাদের হাতে প্রচলিত অস্ত্র। জঙ্গলের যুদ্ধ মাওবাদী ভারত সরকারের মধ্যে যুদ্ধ। মাওবাদীরা নির্বাচনকে একটি প্রতারণা সংসদকে শুয়োরের খোয়াড় মনে করে।
মধ্য ভারতের উপজাতি সম্প্রদায়গুলো দীর্ঘকাল থেকে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে। হো,ওরাঁও, কোল,সাঁওতাল, মন্ডা গোন্ডি সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ, জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং সংগ্রাম করেছে। অতি নির্মমবাবে এসব বিদ্রোহ দমন করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কখনই তাদের সম্পূর্ণ পরাভূত করা সম্ভব হয়নি। বংম পরম্পরায় চলমান বিদ্রোহ ঐসব অঞ্চলের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই কারণে সরকার তাদের পরিকর্পিতভাবে কোনঠাসা বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ইন্টারনেটে একটি নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ্ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা ভাবতীয় পুলিশ বাহিনীর ৩০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, মাওবাদী নেতাদের পরিকর্পিতভাবে হত্যা বিষয়ে। শীর্ষ মাও নেতাদের হত্যা করে তাকে মস্তকবিহীন করাই এর লক্ষ্য। এজন্য ইসরায়েল থেকে যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার, থার্মাল ইমেজিং ইকুইপমেন্ট যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর অতি জনপ্রিয় মনুষ্যবিহীন গোয়েন্দা বিমান আনা হয়েছে। এগুলো দরিদ্র জনসাধারণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অতি যুৎসই অস্ত্র।
রায়পুরা থেকে দান্তেবড়ে ১০ ঘন্টার পথ। মাও অধ্যূষিত বিভিন্ এলাকা হয়ে যেতে হয়। অরুন্ধতী রায় ভালভাবেই মা দান্তেশ্বরী মন্দিওে পৌঁছলেন। সাথে ক্যামেরা, ছোট একটা নারকেল কপালে পাওডারের লাল টিকা ছিল। একমিনিটের মধ্যে এক যুবক কাছে এলো। নাম মংটু। তার মাথায় একটি ক্যাপ। এরপর মোটরসাইকেল যাত্রা। বনের ভেতর দিয়ে বেশ দীর্ঘ পথ। তিন ঘন্টা পর ওরা একটি চওড়া নদীর সাদা বালুতীরে পৌঁছল। নদীর মাঝখানে পারির ধারা। গভীরতা পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত। সহজেই হেঁটে পার হওয়া যায়। নদীর অপরপারে চান্দু অপেক্ষা করছিল। তার হালকা সবুজ জামায় লেখা ছিলহরলিক্স সে অরুন্ধতীকে সাথে নিয়ে পাহাড়ে ওঠা শুরু করল। পথে যেতে যেতে জানালো, সে এলএমজি ছাড়া সব ধরণের অস্ত্র চালাতে জানে। ধীরে ধীরে পাহাড়ে রাত নামল। কিছুক্ষণ পর একটি গ্রামের দেখা পাওয়া গেল। অরুন্ধতী ২০ জন তরুণ তরুণীকে দেখতে পেলেন। চান্দু বলল, ওরা গ্রামের গেরিলা বাহিনী। মনে হলো ওরা মরার জন্য তৈরি হয়ে আছে। কমলার বয়স ১৭ বছর। তার কোমওে ঘওে তৈরি পিস্তল। পুলিশ যদি তাকে পায় তো হত্যা করবে। প্রথমে হয়তো তাকে ধর্ষণ করবে। ্জন্য পুলিশ কে কেউ কোনও প্রশ্ন করবে না। কারণ সে ভারতের নিরাপত্তার জন্য অভ্যন্তরীণ হুমকি।#

তারিখ: ২২/০৮/১৬     

Post a Comment

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget