Halloween Costume ideas 2015

জনে জনে প্রান্তজন...?


নবীউর রহমান পিপলু: প্রতিদিনই দেখা মেলে ‘প্রান্ত’জনদের সাথে। জনে জনে প্রান্তজন। একজন আমার প্রতিবেশী শিশু প্রান্ত। ক’মাস বাদে দু’বছরে পা রাখবে সে। প্রতিদিন সকালে ওদের বাড়ি সংলগ্ন মাঠে দৌড় ঝাপ করে বেড়ায়। ওর দিদিমা ক্লান্ত হয়ে প্রতিবেশীদের হিল্লায় রেখে বাড়ির ভিতরে চলে যান। প্রতিবেশীরা সকলেই শিশু প্রান্তকে কাছে পেলেই আদর করে। কথা বলতে শিখেছে। তাই দাদু বলেই ডাকে সবাইকে। প্রতিদিনই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দেখা হয় ওর সাথে। শহরে যাওয়ার কথা বললেই ছুটে আসে। পরে ফাঁকি দিয়ে আসতে হয়। প্রান্তদের একজন শহরের কান্দিভটা এলাকার কিশোর প্রান্ত। দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া ১৫ বছরের কিশোর এই প্রান্ত। জীবিকার তাগিদে শহরের একটি দোকানের কর্মচারী সে। প্রতিদিন সকালে সে দোকানে আসে এবং রাত্রি ১০ টার দিকে বাড়ি যায়। ওই দোকানের মালিক একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাই সমাজের বিভিন্ন পেশার ও শ্রেণীর মানুষ ওই দোকানে গিয়ে মাঝে মধ্যে বসে পত্রিকা পড়েন।  বিনয়ের সাথে সকলের হুকম পালন করে প্রান্ত। কিশোর প্রান্তকে সবাই ভালবাসেন। ওই দোকানের ক্রেতারাও  প্রান্তকে আদরের সুরে ডাকে। প্রান্ত নামে আমার এক নাতি রয়েছে। থাকে বগুড়ায়। ওর বয়সটি হতে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। দুরন্তপনা সবাইকে অতিষ্ট করে তোলে। আমাদের বাসায় বেড়াতে আসলে ওর দুরন্তপনায় তটস্থ থাকতে হয়। রানী ভবানী কে ছিল, দিঘাপতিয়া রাজাকে দেখেছি কিনা, রাজার হাতি ছিল কিনা-নাটোর আধুনিক স্টেডিয়ামের সামনের হাতিটি কোন রাজার-এমন সব উদ্ভট প্রশ্ন করে ব্যস্ত রাখে বাড়ির সকল সদস্যদের। ওই প্রান্ত বগুড়ায় ফিরে গেলে নিঃস্তব্ধ হয়ে যায় বাড়ির পরিবেশ। সবাই স্বস্তি পেলেও মন খারাপ হয় সবার। ক’দিন প্রান্তর দুরন্তপনার গল্প করেই দিন কাটে বাড়ির সকলের। এক সময় সবাই ভুলে যায় নাতি প্রান্তর দুরন্তপনার  ঘটনাগুলো।
আরও এক প্রান্ত হচ্ছে কাগজের প্রান্ত। ‘দৈনিক প্রান্তজন’ নামে যার পরিচিতি। আজ দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে এই দৈনিকের। একজন কলেজ শিক্ষকের দৃঢ় মনোবল ও  চেতায় ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট প্রথম আত্মপ্রকাশ এই প্রান্তজনের। হাজারো দৈনিকের ভিড়ে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা নিয়ে সংশয় ছিল যার। কিন্তু কবি-সাহিত্যিক সহ এক ঝাঁক নবীন-প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখকদের সহযোগিতায় শুধু টিকেই থাকেনি পেয়েছে প্রতিষ্ঠা। সম্প্রতি ডিএফপির অনুমোদন পেয়েছে পত্রিকাটি। নাটোরে ছাপাখানার সমস্যার কারণে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বসিয়েছেন ছাপাখানা। ঝকঝকে ছাপা এবং সত্যনিষ্ঠ ও দুরন্ত সাহসিকতাপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন করে পত্রিকাটি উত্তরোত্তর  পাঠক প্রিয়তা বেড়েছে। আজ ২৪ আগস্ট প্রান্তজন দুবছর পূর্ণ করবে। মান নিয়ে অনেকেই নানা যুক্তি তুলে ধরেন। কেউ কেউ জোর দিয়েই বলেন, আঞ্চলিক অনেক পত্রিকার তুলনায় দৈনিক প্রান্তজনের গুণগত মান অনেক ভাল। বড় আকারে ছাপা না হওয়ার একটিই কারণ প্রেস সমস্যা। ছোট আকারের হলেও পরিচ্ছন্ন ছাপা, সংবাদের ধরণ, সকল দলের সংবাদ পরিবেশন পত্রিকাটি পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্য । স্থানীয় অনেক খবর এই পত্রিকায় স্থান পাওয়ার কারণে অনেকেই সকাল হলেই পত্রিকার খোঁজ করেন। পত্রিকাটির সব কিছু ভাল হলেও বিতরণে অর্থাৎ সার্কুলেশনের ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে প্রকট। তাই কোন কোন দিন পত্রিকা সকল পাঠকের হাতে পৌঁছে না। এত অনেক পাঠককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। শুধু লেখালেখির জন্য নয়। সকাল হলেই খোঁজ করি দৈনিক প্রান্তজনের। পত্রিকাটি একদিন না পেলেই মন খারাপ হয়। কোন কাজে স্বস্তি আসে না। দিনভর যেন কিছু একটা অপূর্ণ থেকে যায় এমনটি মনে হয়।
প্রতিদিন সকালে প্রতিবেশী শিশু প্রান্তের সাথে খুনসুটি করে চিত্ত রঞ্জন সাহার যমুনা গ্যাসের দোকানে গিয়ে প্রান্তজনের খোঁজ করি। ওই দোকানের কর্মচারী প্রান্ত আমাকে দেখেই বুঝতে পেরে প্রান্তজনের একটি কপি এনে আমার হাতে দিয়ে একটি চেয়ার টেনে বসতে বলে। আর যদি পত্রিকা না পায় দূর থেকেই প্রান্ত বলে আজ এখনও পত্রিকা দিয়ে যায়নি। অন্য কোন পত্রিকা থাকলে তা হাতে দিয়ে বসতে বলে চেয়ার টেনে দেয়। কখনও কখনও চা খাওয়ার কথা বলে।  কোন কোন দিন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রান্তজন হাতে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে সব খবর এক নজরে দেখে নিই। প্রান্তজন পত্রিকার পাতার খবরগুলো দেখে নিয়ে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে রওনা হই নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের উদ্যেশ্যে। দৈনিক প্রান্তজন সকল বাধা ও প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে এভাবেই টিকে থাকবে পাঠকদের মনে। অন্য প্রান্তরাও নিজেদের মেধা-মনন দিয়ে স্ব-স্ব বলয়ে এগিয়ে যাবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে।

নবীউর রহমান পিপলু
মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক
একুশে টেলিভিশন ও দৈনিক সমকাল
০১৭১১৯৫৫৬৯৮

ঊসধরষ।- হধনরঁৎ৭১@মসধরষ.পড়স/হধনরঁৎ৭১@ুধযড়ড়.পড়স

Post a Comment

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget