Halloween Costume ideas 2015

নলডাঙ্গায় নিহত সৌদি প্রবাসী চার শ্রমিকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম


প্রান্তজন রিপোর্ট: সৌদি আরবের মানফুহায় সোফা তৈরীর এক কারখানায় আগুনে পুড়ে নিহত বাংলাদেশীর বাড়ি নাটোরের নলডাঙ্গার খাজুরা জনার্দনবাটি গ্রামে চলছে শোকের মাতম। বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার সময় মানফুহায় সোফা তৈরীর ওই কারখানায় কাজ করার সময় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয় নিহত চারজনই ছিল দিন মজুর। বসতভিটা বিক্রি এবং টাকা কর্জ করে ভাগ্য বদলের জন্য বিভিন্ন সময়ে তারা সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। কিন্তু  ঋন পরিশোধ সহ জমি জিরাত ফিরে নেওয়ার আগেই তাদের অকাল মৃত্যুতে পরিবারগুলো এখন চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেছে। বুধবার রাতেই মৃত্যুর সংবাদ গ্রামে পৌঁছিলে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের পরিবার সহ এলাকাবাসী, নিহত ওই চারজনের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার বিরুপ আবহাওয়ার মধ্যে বিশাল হালতি বিল পার দিয়ে সরেজমিন এলাকায় গিয়ে চোখে পড়ে গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের শান্তনা দিতে তাদের বাড়িতে ছুটে যাওয়া নারী-পুরুষরাও মাতম করছেন এলাকার নিহত চারজনের আকস্মিক মৃত্যুতে। প্রতিবেশীরা জানাননিজেদের ভাগ্য বদলানো সহ পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা জর্নাদ্দনবাটি গ্রামের গফুর মোল্লার ছেলে জামাল হোসেন মোল্লা ১১ বছর আগে, একই গ্রামের আজের উদ্দিনের ছেলে আবদুল ওয়াহেদ অসীম বছর আগে ,খাজুরা ভাটোপাড়া গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম মাস খাজুরা শ্রীপুরপাড়া গ্রামের  সৈয়দ আলীর ছেলে  শামিউল ইসলাম ওরফে সাদ্দাম হোসেন এক বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এদের মধ্যে জামাল হোসেন মোল্লার এই সপ্তাহে দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। মেয়ের বিয়ের কেনা কাটাও করেছেন। বুধবার কারখানায় শেষবারের মত গিয়েছিলেন কাজে। কিন্তু আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। ১১ বছরেও দেশে ফেরা হলো না তার।
নিহত জামালের বড় ভাই আলম মোল্লা জানান, তারা ভাইদের মধ্যে জামাল ৪র্থ দুই মেয়ে তার। ছোট মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে চলতি সপ্তাহেই তার দেশে আসার কথা। বুধবার সকালেই স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছে। ছোট মেয়ে শাকিলার বিয়ের সব কেনা কাটা করেছে বলেও সে  সবাইকে জানিয়েছে। ধার কর্জ  বসতভিটা বিক্রি করে সে সৌদি আরব যায়। এখনও ঋনের টাকা  পরিশোধ করতে পারেনি। শুধু মাত্র শতক জমি কিনে সেখানে তিন মাস হলো নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছে। কিন্তু সেই বাড়িটাও দেখা হলো হলনা।
স্থানীয় ইউপি মহিলা সদস্য নাজমা বেগম জানান, বাপ-দাদার ভিক্ষাবৃত্তির টাকায় গড়ে তোলা বসতভিটা বন্ধক রেখে ভাগ্য বদলাতে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন আমীরুল ইসলাম। এছাড়া ব্যাংক থেকে আরো প্রায় লাখ টাকা ধার করে সে। তার মৃত্যুতে পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম। ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের শংকায় কেঁদে চোখের পানি ফেলছেন আমিরুলের স্ত্রী মোমেনা। এখন ঋনের টাকা শোধ হবে কিভাবে বা ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াবে এনিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন স্ত্রী মনোয়ারা। এদিকে আমিরুলের বছর বয়সী ছেলে তার বাবাকে এনে দেওয়ার কথা বলে কেঁেদই যাচ্ছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকাহত গ্রামবাসি আহাজারি করায় শিশুটিকে শান্তনা দিতেও যেন ভুলে গেছে সবাই। প্রতিবেশী হামিদ, আবুল কালাম জানান, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমিরুল কৃষি শ্রমিক নৌকা চালিয়ে মানবেতর জীবন যাবন করতেন। এছাড়া বাপ-দাদাদের ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন কাটাতে দেখে ভাগ্য বদলের প্রতিজ্ঞায় আমিরুল সৌদি আরবে যায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় তার সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।
ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবা-মার মৃত্যুর পর ভিটেমাটি বিক্রি করে স্ত্রী এক ছেলেকে রেখে ২০০৮ সালে সৌদি আরবের মানফুহায় যান আব্দুল ওয়াহেদ অসীম। মাস আগে মেয়ে সাদিয়ার জন্ম হয়। মেয়েকে দেখতে ২০ আগষ্ট দেশে আসার কথা। কিন্ত নবাগত কন্যার মুখ দেখা হলোনা তার।
খাজুরার শ্রীপুরপাড়ার সাদ্দাম হোসেনের বাবা মারা যান শিশুকালে। বসত ভিটা ছাড়া তাদের জমি-জমা কিছুই নেই। মাসহ ভাই-বোনের সংসার তাদের। অন্যের বাড়িতে দিন মজুরী করে সংসার চালাতো সে। এক  সময় স্বপ্ন দেখে বিদেশে গিয়ে ভাগ্য বদলাবে। বাড়িঘর করবে, ঘটা করে বোনদের বিয়ে দিবে। তাই সে বসতভিটা বন্ধক রেখে এবং ধারকর্জ্য করে এক বছর আগে লাখ টাকায় সৌদিআরব যায়। কিন্তু তার স্বপ্ন্ ভেঙ্গে দিল সর্বনাশা আগুন।
প্রতিবেশী নজর আলী জানান, সাদ্দামের অকাল মৃত্যুতে ওই সংসারে এখন হাল ধরার কেউ রইলো না। ধার দেনা নিয়ে তার মান-বোনদের দুর্বিসহ জীবন কাটাতে হবে।
খাজুরা ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সৌদি আরবে কর্মরত এলাকার চার জনের মৃত্যু সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে নিহতরে পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে শংকা প্রকাশ করেন এবং নিহতদের মরদেহ দ্রুত দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আতিউর রহমান জানান, বিষয়টি অত্যান্ত বেদনা দায়ক। তাদের মরদেহগুলো দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে।


Post a Comment

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget