রাজু আহমেদ, সিংড়া:
বর্ষায় নৌকা
ভ্রমন সকলের
কাছেই খুব
প্রিয়। কিন্তু
অনেকে নৌকা
ভ্রমনের জন্য
ভাল জায়গা
খুঁজে পান
না। তাই
আপনারা যারা
নৌকা ভ্রমনে
আগ্রহী তাদের
জন্য নাটোরের চলন বিল হতে পারে
চমৎকার
সৌন্দর্যম-িত একটি ভ্রমন
স্থান। চলুন
জেনে নিই
চলন বিলে
নৌকা ভ্রমন
নিয়ে কিছু
মজার তথ্য।
চলনবিলের প্রধান আর্কষণ
হল এই
বিল ।
বাংলাদেশের বৃগৎ বিল এটি। সচারচর
বাংলাদেশের আর দশটি বিলের মত
না ।
কারন বর্ষা
মৌসুমে এই
বিলে পানি
স্রোতের ধারায়
প্রবাহিত হয়
। সচারচর
বিলে
স্রোত দেখা যায় না কিন্তু
চলনবিলের নামকরনের
সাথেই চলন
কথাটার একটা
সার্থকতা আছে
। বর্ষা
মৌসুমে বিলের
উত্তর পশ্চিম
দিক
থেকে ¯্রােতের ধারায় পানি বিলের
ভেতরে প্রবেশ
করে এবং
পূর্ব দক্ষিন
দিক দিয়ে
প্রবাহিত হয়ে
বের হয়ে
যায় ।
চলনবিলের পানির
প্রধান উৎস
আত্রাই নদী
।
আপনি কিভাবে চলনবিলে
আসবেন এবং
চলনবিলে এলে
দেখার মতই
বা কি
আছে ? যেহেতু
চলনবিল উত্তর
বঙ্গের ৩টি
জেলা নাটোর,
সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলার মধ্যে
আবস্থিত
সেইজন্য আপনি যদি সিলেট ঢাকা
অথবা চট্টগ্রাম
বিভাগ থেকে
আসতে চান
তাহলে আপনাকে
আসতে হবে
ঢাকা হয়ে,
ঢাকা থেকে
রাজশাহীর গাড়িতে
সিরাজগঞ্জ আথবা নাটোরের কাছিকাটা তে
নামবেন ।
কাছিকাটা দিয়ে
যাবার ক্ষেত্রে
কাছিকাটা থেকে
৮ কি.মি দুরে
চাঁচকৈর বাজার
। চাঁচকৈর
বাজার থেকে
৫-৬
কি. মি.
দুরে চলনবিলের
প্রান্ত ঘেষে
খুবজীপুর গ্রামে
গড়ে উঠা
চলনবিল জাদুঘর
। আর
চলনবিল জাদুঘরের
পরেই পাবেন
সেই কাংঙ্খিত
চলনবিল ।
অথবা ঢাকা কিংবা
দক্ষিনাঞ্চল হয়ে আসলে সরাসরি নাটোর
নামবেন। নাটোর
থেকে ১৮কিঃমিঃ
অদূরে সিংড়া
উপজেলা ।
সিংড়া বাসট্যান্ড
থেকে কিছুদুর
হেটেই বালুয়া
বাসুয়া মোড়
সেখান থেকে
অটোরিকসা,ভ্যান,রিকসা যোগে
যেতে পারবেন
চলনবিলে ।
ভাড়া ১০
টাকা। নামবেন
পেট্রেবাংলা পয়েন্টে। যেখানে একসময় প্রাকৃতিক
গ্যাসের সন্ধান
মিলেছিল ।
এখানে নেমে
দেখতে পারবেন
চলনবিলে বুক
চিরে সাবমার্সিবুল
সড়ক। বর্তমান
সরকারের তথ্য
ও প্রযুক্তি
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক চলনবিলবাসির
স্বপ্নের এ
সড়ক নির্মান
করেন। যার
ব্যায় হয়েছিল
২১ কোটি
। ১৪
কিঃমিঃ এ
সড়ক সরাসরি
সিংড়া-তাড়াশ
উপজেলার যোগাযোগের
সেতুবন্ধন তৈরি করেছে । এ সড়ক দেখতে
খুব সুন্দর।
বর্ষা কিংবা
শুস্ক মৌসূমে
আপনি এলে
নয়ানাভিরাম এ সড়ক চোখ জুড়াবে।
এ সড়ক
দিয়ে চলে
নৌকা, চলে
সব ধরনের
গাড়ি। দুরদুরান্ত
হতে ভ্রমনপিপাসুরা
ছুটে আসছে
এখানে। ঐখানেই
রয়েছে চলনবিল
পর্যটন পার্ক।
সেখানে বেড়ানোর
সুন্দর জায়গা
রয়েছে। রয়েছে
বিভিন্ন রাইড।
চলনবিল পর্যটন
পার্ক এর
সবচেয়ে আকর্ষন
ঝুলন্ত সড়ক।
যেখানে দাড়িয়ে
উপভোগ করতে
পারবেন চলনবিলের
চোখজুড়ানো দূশ্য। নৌকায় যেতে পারবেন
ঐতিহাসিক তিশিখালী
মাজার। এ
মাজারের অনেক
জনশ্রুতি রয়েছে।
বর্ষাকালে প্রতিদিন শত শত মানুষ
এখানে এসে
মানত করেন।
এছাড়া মাজার
ঘুরতেও আসেন
অনেকে। এর
আশপাশে রয়েছে
ডাহিয়া,সাতপুকুরিয়া,হিজলা গ্রাম।
গ্রাম গুলো
দেখতে ও
সুন্দর লাগে
দ্বীপের মত
দাড়িয়ে থাকে
।
ঢাকা থেকে রাজশাহীর
উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন যমুনা সেতু
পার হবার
পর থেকে
সিরাজগঞ্জ থেকে নাটোর যাবার সংযোগ
সড়কে আপনি
নিশ্চিত ভিন্ন
ধরনের এক
অনুভতি পাবেন
। রাস্তার
দুই পাশে
নিরব পানির
ঝলকানি তাকালে
যেন চোখ
জুরিয়ে যায়
। যখন
আপনি চলনবিলের
মাঝদিয়ে ভ্রমন
করবেন দেখবেন
চলনবিলের মাঝে
প্রতিটি গ্রামকে
মনে হবে
এক একটি
করে দ্বীপ
। বর্ষা
মৌসুমে ওই
গ্রামগুলাতে যাবার একমাত্র উপায় নৌকা
।
দেশের সর্ববৃহৎ এই
বিলটি বিভিন্ন
খাল দ্বারা
সংযুক্ত অনেকগুলো
ছোট ছোট
বিলের সমষ্টি
নিয়ে গঠিত।
অপরুপ সৌন্দর্য্যের
এই চলন
বিল কাছ
থেকে না
দেখলে মনের
গহীন কোঠায়
অতৃপ্তি থেকে
যাবে যে
কারোর। যেমনি
নাম চলন
বিল তেমনি
তার সৌন্দর্য্য।
বর্ষাকালে তো পানিতে একাকার হয়ে
যায়। চলন
বিল বর্ষাকালেই
অপরুপ সাজে
সজ্জিত হয়।
তখন দর্শনার্থীর
সংখ্যায় থাকে
ভরপুর।
চলন বিল গঠনকারী
ছোট ছোট
বিলগুলো হলো-
পিপরূল, পূর্ব
মধ্যনগর, লারোর,
ডাঙাপাডা, তাজপুর,চলন,মাঝগাঁও,
চোনমোহন,শাতাইল,খরদহ,দারিকুশি,কাজীপাডা,গজনা,
বড়বিল, সোনাপাতিলা,
ঘুঘুদহ, গুরকা,
দিক্ষিবিল এবং চিরল।
চলন বিলের গঠন
ঐতিহাসিকভাবেই আত্রাই ও বড়াল নদীর
সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
আত্রাই নদী
ছিল চলন
বিলের প্রধান
যোগান দানকারী
প্রণালী যা
বৃহত্তর রাজশাহী
জেলার উত্তরাংশ
ও দিনাজপুর
এলাকার জল
নিষ্কাশন করত।
চলন বিলের মধ্য
দিয়ে
কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়। এর
মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো- করতোয়া,
আত্রাই, গুড়,
বড়াল, মরা
বড়াল, তুলসী,
ভাদাই, চিকনাই,
বরোনজা, তেলকুপি
ইত্যাদি।
চলন বিলে পাওয়া
যায় বিভিন্ন
প্রজাতির মাছ
তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হলো- চিতল, কৈ, মাগুর,
শিং, টাকি
বোয়াল, শোল,
ফলই, মৃগেল,
চিংড়ি, টেংরা,
কালিবাউশ, রিটা, গজার, বৌ, সরপুটি, তিতপুটি,
পুঁটি, গুজা,
গাগর, বাঘাইর
কাঁটা প্রভৃতি
জাতের মাছ।
চলনবিলে এসে
বিভিন্ন প্রজাতির
সুস্বাদু মাছ
এবং শটকি
ও পাবেন।
বিশেষ করে
সিংড়া উপজেলায়
সবচেয়ে বড়
মৎস্য আড়ৎ
রয়েছে। প্রতিদিন
ভোর ৫টা
হতে সকাল
৯টা পযর্ন্ত
হরেক রকম
মাছ কিনতে
পারবেন।
অন্যরকম এক ভাললাগা
কাজ করে
চলনবিল ভ্রমনে
বের হলে
। তবে
মনে রাখবেন
বিল ভ্রমনে
বেড়ানোর আগে
অবশ্যই চারপাশের
আবহাওয়ার আবস্থা
নিশ্চিৎ হওয়া
চাই ।
আবহাওয়া অনুকুলে
থাকলে নৌকা
ভ্রমন আনন্দদায়ক
হবে।

Post a Comment