নবীউর রহমান পিপলু:
২০১১ সালের
শেষভাগে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার
নাটোর সফরকালে
শহরবাসীকে দেয়া ৭টি প্রতিশ্রুতির অন্যতম
ছিল শহরের
মধ্য দিয়ে
যাওয়া সড়কটির
ডিভাইডারসহ প্রশস্তকরণ করা। বহু প্রতিক্ষার
পর চলতি
বছর আলোর
মুখ দেখেছে
প্রকল্পটি। গত অক্টোবর মাস থেকে
শুরু হয়েছে
দৃশ্যমান কাজ।
অবৈধ দখল
হওয়া সড়ক
ও জনপথ
বিভাগের জায়গায়
নির্মিত স্থাপনা
ভেঙ্গে ফেলার
মাধ্যমে দখলমুক্ত
করার কাজ
শুরুতে চলছিল
ঠিক ভাবেই।
তবে মাস
পার হতেই
প্রশ্ন উঠেছে
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী
সংস্থার দায়িত্বে
থাকা সড়ক
ও জনপথ
বিভাগের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে,
সড়ক
সম্প্রসারণের জন্য অবৈধভাবে
দখলকৃত জায়গায়
নির্মিত স্থাপনা
ভাঙ্গার পরিবর্তে
টাকার বিনিময়ে
তা বিরত
থাকছে সংশ্লিষ্ট
বিভাগের কতিপয়
অসাধু কর্মকর্তা।
তাদের টাকা
দিলে থেমে
যাচ্ছে ভাঙ্গার
কাজ। আর
না দিলে
নিয়ম মেনে
ভাঙ্গা পড়ছে
অবৈধ দখলকারীদের
স্থাপনা। ফলে
সড়ক সম্প্রসারণের
পরিবর্তে সংকুচিত
থেকে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায়
ক্ষোভ প্রকাশ
করছেন ক্ষতিগ্রস্ত
অবৈধ দখলকারীরা।
তাদের দাবী,
সড়ক বিভাগের
লোকজনদের টাকা
দিলেই অবৈধ
স্থাপনার বৈধতা
দিচ্ছে সড়ক
বিভাগ। তবে
এই অভিযোগকে
ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রপাগান্ডা বলে দাবী
করেছেন সংশ্লিষ্ট
দপ্তরের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, এডিবির
অর্থায়নে নাটোর
শহরের হরিশপুর
বাইপাস মোড়
হতে বনবেলঘরিয়া
বাইপাস মোড়
পর্যন্ত এবং
নাটোর শহরের
প্রধান সড়কের
মিডিয়ানসহ পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতায়
মোট ৫
দশমিক ৮৬
কিলোমিটার দৈর্ঘ ও ডিভাইডার, ফুটপাত
কাম ড্রেনসহ
৪৮ ফুট
প্রস্থের সম্প্রসারিত
রাস্তার প্রাক্কলিত
ব্যয় ধরা
হয়েছে ৫৮
কোটি ৩৩
লাখ টাকা।
এর মধ্যে
ডিভাইডারের দু’পাশে ১৮ফুট করে
সড়ক প্রশস্তকরণ,
৪ ফুট
ডিভাইডার, ১২০ মিটার আরসিসি ক্রস
ড্রেন ও
উভয় পাশের
৪ফুট করে
ফুটপাত কাম
ড্রেন নির্মাণের
ব্যবস্থা করা
হয়েছে। বিশাল
এ প্রকল্পটির
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান
শামীম এন্টারপ্রাইজ
প্রাইভেট লিমিটেড
এন্ড মীর
শরীফুল ও
হাবিবুল আলম
জয়েন্ট ভেঞ্চার।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয়েছে
২০১৯ সালের
জুনের মাঝামাঝি। সম্প্রসারিতব্য
সড়কটি রাজধানী
ঢাকা ও
বগুড়া জেলার
সাথে ও
রাজশাহীর সাথে
নাটোর শহরের
সংযোগ সড়ক।
সড়কটির দুই পার্শে¦
নাটোর রেলওয়ে
স্টেশন, বাস
টার্মিনাল, বাফার সার গোডাউন, একাধিক
সরকারী প্রতিষ্ঠান,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ও ব্যবসা
প্রতিষ্ঠানসহ রয়েছে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক স্থাপনা।
এগুলোর সিংহভাগ
প্রতিষ্ঠানের কিছু না কিছু অংশ
পড়েছে সরকারী
জায়গায়। যা
অবৈধ দখল
হিসেবে বিবেচিত।
অভিযোগ উঠেছে,
ছোট পরিসরের
স্থাপনাগুলো ভাঙ্গার ক্ষেত্রে দখলদাররা বাধা
না দিলেও
তুলনামূলক বড় স্থাপনার জন্য সড়ক
ও জনপথ
বিভাগের কর্তাদের
মোটা অংকের
উৎকোচ দিচ্ছেন
দখলদাররা। টাকা না দেয়ায় ভাঙ্গা
পড়ছে তাদের
স্থাপনা। ফলে টাকায় কমছে
রাস্তা। এতে
করে ক্ষুদ্ধ
হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত
অবৈধ দখলদাররা।
শহরের আলাইপুর এলাকার
ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুস সালাম, রামপাল, নান্টু
মিয়া অভিযোগ
করে বলেন,
তাদের স্থাপনা
ভাঙ্গা
হলেও প্রভাবশালীদের স্থাপনা ভাঙ্গা হচ্ছে
না। তাদের
স্থাপনার অপর
অংশের ব্যবসায়ী
আলাল, আজাদুল
ইসলাম ও ডিসি অফিসের সাবেক
কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন পিন্টুর স্থাপনা বাঁচিয়ে
রেখে সড়ক
সম্প্রসারণ কাজ করা হচ্ছে। তাদের
স্থাপনাগুলো ২ থেকে ৩ ফুট সরকারী
জায়গায় থাকলেও
তা ভাঙ্গা
হয়নি। অথচ
সড়ক বিভাগ
থেকে মাফ
দিয়ে স্থাপনা
সরিয়ে নেওয়ার
নির্দেশ দেওয়া
হয়েছিল তাদের।
কিন্তু
সড়ক বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে
টাকা দিয়ে
ম্যানেজ করা
হয়েছে। গোটা
সড়ক এলাকায়
এভাবেই টাকার
বিনিময়ে ছাড়
দেওয়া হচ্ছে
বলেও অভিযোগ
করেন অনেকেই।
এছাড়া স্থানীয়
একটি সূত্র
জানায়, আলাইপুর
এলাকায় মার্কেন্টাইল
ব্যাংক ভবনের
সামনের অংশসহ
ভবনের পাতাল
সড়ক ও
সিঁড়ি পথ
সরকারী জায়গায়
রয়েছে।
ডিসি অফিসের সাবেক
কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন পিন্টু কাউকে টাকা
দেওয়ার অভিযোগকে
ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন, অধিগ্রহণ
করা তার
৯ শতক
জমি চিহ্নিত
করে দেয়
সড়ক বিভাগ।
সেই চিহ্নিত
স্থান ভেঙ্গে
সড়ক সম্প্রসারণের
কাজ করা
হচ্ছে। নিন্দুকেরা
মিথ্যাচার করে তার সুনাম ক্ষুন্ন
করছেন।
ব্যবসায়ী আলাল এধরনের
অভিযোগকে ভিত্তিহীন
দাবী করে
বলেন, জেলা
প্রশাসন, সড়ক
বিভাগ ও
পৌরসভার প্রতিনিধিদের
উপস্থিতিতে সড়ক বিভাগের জায়গা চিহ্নিত
করা হয়।
সেই স্থান
ধরেই সম্প্রসারণ
কাজ হচ্ছে।
ব্যবসায়ী আজাদুল ইসলাম
বলেন, তিনি
নিজে থেকে
সরকারী জায়গায়
থাকা তার
স্থাপনা সরিয়ে
নিচ্ছেন। তবে
বিপদে রয়েছেন
বাসাবাড়ির সেফটিক ট্যাংক নিয়ে। কাউকে
অর্থ দেওয়ার
অভিযোগকে ভিত্তিহীন
ও মিথ্যাচার
বলে দাবী
করেছেন তিনি।
সম্প্রসারণ কাজে অর্থের
বিনিময়ে স্থাপনা
রক্ষার অভিযোগ
অস্বীকার করে
প্রকল্পটির ওয়ার্ক এসিসটেন্ট মোয়াজ্জেম হোসেন
দাবী করেন,
স্বচ্ছতার সাথেই সমগ্র কাজ সম্পন্ন
করা হচ্ছে।
অবৈধ দখলকারীদের
থেকে সওজের
জায়গা উদ্ধার
করার কারণে
দখলদাররা ক্ষুদ্ধ
হয়ে এ
অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
সড়ক বিভাগের স্থানীয়
একটি নির্ভরযোগ্য
সূত্র জানিয়েছে,
চলতি নভেম্বরে
বেশ কিছু
কারণে প্রকল্পটি
সংশোধিত হচ্ছে।
এর মধ্যে
স্টেশন বাজার
রেলক্রসিং থেকে একতার মোড় হয়ে
পূর্বদিক ঘুরে
মসজিদ পর্যন্ত
রাস্তাটি ১৮
ফুটের পরিবর্তে
আরো ৬
ফুট বৃদ্ধি
করে ২৪
ফুট করা,
আলাইপুর মুসলিম
ইন্সটিটিউট থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদ পর্যন্ত
এবং মাদরাসা
মোড় এলাকায়
রাস্তাটি ৪৮
ফুট থেকে
বৃদ্ধি করার
প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রয়োজনে জায়গা অধিগ্রহণ
করা, পৌরসভার
পানি সরবরাহের
লাইন নিয়ে
সৃষ্ট জটিলতা
নিরসনে প্রাক্কলিত
দুই কোটি
৭লক্ষ টাকার
অতিরিক্ত বরাদ্দ
সংক্রান্ত বিষয়ে প্রকল্পটি সংশোধিত-বর্ধিত
হবে। এতে
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ও প্রাক্কলন
মূল্য বৃদ্ধি
পাবে বলে
ধারণা করা
হচ্ছে।
নাটোর সড়ক ও
জনপথ বিভাগের
নির্বাহী প্রকৌশলী
আশরাফুল ইসলাম
প্রাং জানান,
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ চলছে।
সওজের জমি
দখলমুক্ত করার
কাজে
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ল্যান্ড শাখা,
নাটোর পৌরসভা
ও সওজের
৩ জন
সার্ভেয়ার নিযুক্ত রয়েছেন বিধায় টাকার
বিনিময়ে কোন
অনিয়ম করে
কাউকে অনৈতিক
সুবিধা দেয়ার
সুযোগ নাই।
এছাড়া কিছু
কিছু এলাকায়
নতুন করে
জমি অধিগ্রহণের
প্রস্তাব করা
হবে বলেও
তিনি জানান।
বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন
রয়েছে। তবে
কাজটি নির্ধারিত
সময়ের মধ্যে
সম্পন্ন হবে
বলে তিনি
আশা প্রকাশ
করেছেন।

Post a Comment