Halloween Costume ideas 2015

অবশেষে ৩৪ দিন পর মুক্ত ১২৫ পরিবার


ইসাহাক আলী: ৩৩দিন ধরে অবরুদ্ধ ১২৫ পরিবারশিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর মানবজমিনের নাটোর প্রতিনিধি ইসাহাক আলীকে হুমকি দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ আলী দেওয়ান। বিষয়টি জানার পর নাটোরের সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক এর নিন্দা জানান। এছাড়া নাটোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন সাংবাদিক ইসাহাক আলী। এদিকে পুনরায় ফলোআপ রিপোর্ট করতে প্রেসক্লাবের সভাপতি সম্পাদকসহ সিনিয়র সাংবাদিকদের একটি টিম যান নলডাঙ্গার বাঁশিলা গ্রামে। এরপরপরই ছুটে যান নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধিরা। দিনভর মিটিং শেষে অবশেষে ৩৪দিন পর অবরোধ উঠে গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাশিলা গ্রামের ১২৫ পরিবার। সবার মধ্যে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয় সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। এনিয়ে প্রশাসন সংবাদকর্মিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এলাকার মানুষ।
এরআগে গত ১১ সেপ্টেম্বর ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মাধনগরের ইউনিয়নের বাঁশিলা গ্রামের সাথে সংঘর্ষ হয় পিপরুল ইউনিয়নের বিলজোয়ানী গ্রামের লোকজনের। ঘটনার পর থেকেই বাঁশিলা গ্রামের ১২৫ পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে বিলজোয়ানী গ্রামের যুবলীগ নেতা শাহ জালালের সমর্থকরা। ফলে নাটোরের নলডাঙ্গার বাঁশিলা পূর্ব পাড়ার অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্যরা চাকুরি ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা কাজে বাড়ির বাহিরে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলেও যাতায়াত কর্মজীবি নারীরাও হয়ে পড়েন অবরুদ্ধ। বিষয়টি জানতে পেরে মানবজমিনের প্রতিনিধিসহ নাটোরের সাংবাদিকরা সরেজমিন ঘুরে এসে জেলা প্রশাসনসহ উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন।
শুক্রবার মানবজমিনের শেষ পৃষ্ঠায়৩৩দিন ধরে অবরুদ্ধ ১২৫ পরিবারশিরোনামে সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। প্রকাশ হয় আরো কিছু প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। নজরে আসে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের। কিন্তু এলাকাবাসীর সুষ্পষ্ট অভিযোগ সত্বেও সংবাদে নিজের ভূমিকার প্রসঙ্গ থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ আলী দেওয়ান। যদিও সংবাদের ওই অংশেই চেয়ারম্যানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি মানবজমিনের নাটোর প্রতিনিধি ইসাহাক আলীকে অন্য এক সংবাদকর্মির ফোন থেকে কথা বলে এর কারণ জানতে চান। এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে কে তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে তার প্রমান উপস্থাপন করতে বলেন। সাংবাদিক ইসাহাক আলী তাকে বিষয়টি নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ জানানোর কথা বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ইসাহাককে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন। ঘটনার পর বিষয়টি মানবজমিন প্রতিনিধি প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ নাটোরের সিনিয়র সংবাদকর্মি এবং সহকর্মিদের জানান।
এরপর শুক্রবার রাতে নাটোর প্রেসক্লাব সভাপতি রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাহী পরিষদের সভায় এর বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাশ হয়। সময় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দুলাল সরকারসহ নির্বাহী পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাতেই নাটোর সদর থানায় চেয়ারম্যান আমজাদ আলী দেওয়ানের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন ইসাহাক আলী। সময় সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদল সদর থানায় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, সদর সার্কেল এএসপি রফিকুল ইসলাম ওসি মিজানুর রহমানের সাথে মত বিনিময় করেন।
শনিবার বিষয়টি সরেজমিনে জানতে নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি সম্পাদকসহ ১৩জন সাংবাদিকের একটি দল আবারো ঘটনাস্থল বাঁশিলা পূর্ব পাড়ায় যান। তার আগেই ঘটনাস্থলে যান ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন। সময় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এলাকাবাসী চেয়ারম্যানের সামনেই তার গাফিলতির অভিযোগ আনেন। তবে চেয়ারম্যান বলেন তিনি সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সমাধান করতে পারেননি। অবরুদ্ধ অবস্থা থাকার বিষয়টিও তিনি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। এছাড়া তিনি তার আচরনের জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন।
এরপর নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সাংবাদিকদের সামনেই তিনি তাৎক্ষণিক বিষয়টি মিমাংসার উদ্যোগ নেন। দুই ইউনিয়নের জন প্রতিনিধি ঘটনার সাথে জড়িতদের নিয়ে সালিশী বৈঠক করেন। শনিবার দিনভর সালিশী বৈঠক শেষে বিষয়টি মিমাংসা হয়। তৈরি করা হয় একটি খসড়া সালিশ নামা একটি কমিটি। ১৫ সদস্যের ওই কমিটি মঙ্গলবার বিচার কার্যের চুড়ান্ত আপোষনামা স্বাক্ষর করে উভয় পক্ষ প্রশাসনকে প্রদান করবেন। এদিকে শালিশী বৈঠকের পর উভয় পক্ষের মানুষদের কোলাকুলি করানো হয় অবরোধ মুক্ত করে দেয়া হয়। সময় সালিশী বৈঠকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারছাড়াও নাটোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক দুলাল সরকার, ডিবি ্ওসি আব্দুল হাই, নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, পিপরুল ইউপি চেয়ারম্যান কলিমুদ্দিন , মাধনগর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ আলী দেওয়ান, সাংবাদিক ইসাহাক আলী, আল মামুন, উভয়গ্রামের প্রধানবর্গ, দুই পক্ষের উসমান আলী শাহজালাল দেওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া দুইগ্রামের কয়েক মানুষ সালিশে উপস্থিত ছিলেন।
সময় বৈঠকে গ্রামে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। শেষে সমাজের শান্তি কামনা করে মোনাজাত সন্ত্রাস বিরোধী শপথ পাঠ করানো হয়।
এদিকে টানা ৩৪ দিনের অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান হলে এলাকার মানষের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্বস্তি ফিরে আসে নারী পুরুষসহ শিশু কিশোরদের মাঝে। সমস্যার সমাধানে মিডিয়া কর্মি প্রশাসনের ভূমিকায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন উভয় গ্রামবাসী।

Post a Comment

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget