Halloween Costume ideas 2015

পিন্টু রহমান এর গল্প/আড়ালে তার মেঘ হাসে


ডানাভাঙা পাখির মধ্যেও আহাজারি থাকে, চোখের পাতায় কাতরতা থাকে, নতুন ঠিকানার কৌতুহল থাকে- কিন্তু শহীদের মধ্যে নেই; নিজেকে ঝড়ে বিধ্বস্ত পাখির সাথে তুলনা করলেও ওইসব ভাবনা তাকে ছুঁয়ে যায় না। কিংবা বোধহীনতার কারণে তাকে আঁচড় কাটতে পারে না। দেখে মনে হয় নিজেকে পুরোপুরি ঝড়ের মুখে সঁপে দিয়েছে। রাতের নির্জনতায় কুয়াশা হামাগুড়ি দেয়। কিন্তু শহীদের শীত নেই। চিড়িয়াখানার পশুদের সম্ভবত শীত থাকতে নেই!
পশু!
পশুই বটে; মানুষ আর রইলো কই!
আলো-আঁধারীর যুপবদ্ধে দৃশ্যমান ঘোর আরো আরো রুপক তৈরিতে সহায়তা করে; ফলে আলো-অন্ধকার ক্রম পরষ্পরায় তার চোখেমুখে ছায়া ফেলে যায়; অস্থিত্ব সংকটও প্রকট হয়ে ওঠে।  নিজেকে অসহায়  মনে হয়। সংকটের শেষ কোখায়! মেঘের আড়ালে যদি সূর্যের দেখা না মেলে!
পরিবর্তন আর পরিবর্তন!
আহা, পরিবর্তনের স্রোতে দুনিয়া যেনো কড়কূটোর মতো ভেসে চলেছে!
হাজিমোড়ের কথায় ধরা যাক- বীপুলা পৃথিবীতে জায়গার অভাব নেই, এমনকি আশেপাশেও না; কিন্তু আলমডাঙা  শহরের এই বিশেষ মোড়ের বিশেষত্বই অন্যরকম! ঘিঞ্জি বস্তির সাথে যোগ হয়েছে ফুটপাত দখলের প্রতিযোগিতা! অতিথি পাখির  ডানায় ভর করে শীতকন্যার আগমনের পূর্বেই ভুমি অফিসের পতিত জমি, স্কুলঘরের বারান্দা, শৌচাগারের প্রবেশ পথ, ম্যানহোলের ঢাকনা পর্যন্ত বেদখল হয়ে যায়! অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে অস্থায়ী দোকানঘর- স্বল্প পরিসরে হাজার-হাজার পুরাতন কাপড়ের সমাহার! নামকরনেও পরিবর্তন; কেউ কেউ নিকছন পট্টি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।  
শীতরাত্রির দৈর্ঘ্যরে সাথে সাথে নিকছন পট্টির খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। দুর-দুরান্ত থেকে আগত মানুষের উপস্থিতিতে পরিবেশ সরব হয়ে ওঠে। চাহিদার সাথে যোগানও বদলে গেছে; বদলে গেছে মানুষের রুচিবোধ। আগে কেবলমাত্র দরিদ্র জনগোষ্ঠীর যাতায়াত ছিল। আর্থিক স্বক্ষমতার কারণে ওরা না এসে পারতো না। কিন্তু সাম্প্রতিক চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন; ধনিক শ্রেণীর বৌ-ঝিঁরা পর্যন্ত হুমড়ি দিয়ে পড়ে।
হয়তো শহীদের ক্ষেত্রেও তাই; পুরাতন কাপড়ের ঘ্রাণ নিতে কিংবা শীত নিবারণের নিমিত্তে ছেলেটি হয়তো পথ মাড়িয়েছিল। কিন্তু কে জানতো এতবড় ভোগান্তি তার জন্য ওত পেতে বসে আছে!
আলমডাঙা।
মফঃস্বল শহর।
সন্ধ্যা নামতে না নামতে অনেক রাত।
নিকছন পট্টিতে ধীর পায়ে নেমে আসে রাতের নির্জনতা; থেমে যেতে চায় দিনান্তের কোলাহল। সময় খদ্দেরের তেমন ভীড় থাকে না। চোরাই লাইনের বিজলীবাতির স্বল্প আলোয় দোকানদাররা অল্প-অল্প করে  দোকান গোছাতে আরম্ভ করে। এর মাঝেও আঁড়চোখে দু'একজন খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করে। শেষ সময়েও যদি কিছু বেচাবিক্রি হয়পথচলতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য কেউ কেউ আবার দরাজ গলায় হাঁক ছাড়ে, আসেন গো ভাই আসেন, খাঁটি বিদেশী মাল; পানির দরে ছাড়ি দিলাম, আগে আসলি আগে পাবেন। মাল ছিঁড়া-ফাটা হলি ঘোরত নবো। আসেন গো ভাই জলদি করি আসেন, ইট্টু পরেই দুকান বন্দ করি দেবো।
নানাবিধ কৌশলে ক্রেতাসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রতিযোগিতা; এতে ফলও হয়, দোকানীর দরদভরা কণ্ঠস্বরে শহিদ মূহূর্তের জন্যে থমকে দাঁড়িয়েছিল; লালরঙা সোয়েটারটার পানে চোখ পড়তেই ঘরমুখো পা দোকানমুখী হয়েছিল। থরে-থরে সাজানো কাপড়সমূহ উল্টেপাল্টে  দেখা শেষে উলের তৈরি লাল রঙের সোয়টারটি পুনরায় চোখের সম্মুখে মেলে ধরেছিল। নিজের মধ্যে ভাঙা-গড়ার খেলা; সম্ভব অসম্ভবের দোলাচাল, হায় হায়, এও কি সম্ভব!
তার চোখে-মুখে রাজ্যের বিস্ময়; বিস্ময়ের ফাক গলে গোলাপীর করুণ মুখটা মূহূর্তের জন্য মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মেরেছিল! দোকানীর চোখে-মুখেও কৌতুহল। সারাদিনে বেচাবিক্রি ভালো হয়নি, আল্লাহ ভালো করলে এবার বোধহয় পুষিয়ে যাবে
হাসি-হাসি মুখ করে লোকটি শহীদকে জিজ্ঞেস করে, কি হোলু ভাই, অরাম করি কি দেকচেন? ছুইটারডা কি আপনের পছন্দ হয়িচে?
শহীদ হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ে।
দোকানী মনে মনে আরো খানিকটা আস্বস্ত হয়। তথাপি হতাশার সুরে আক্ষেপ করে, জব্বর জিনিসরে ভাই, অভাবের সংসার না হলি বেচতাম না, নিজিই রাকি দিতাম। কপাল, কপাল, কপালের দোষ ভাই; কপাল না হলি বাপ-দাদার পিশা ছাড়ি কি একেন আসতাম!
একটা কপোট দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দোকানী নিজেই সোয়েটারটা হাতে তুলে নেয়। শহীদের বুকে-পিঠে মেলে ধরে রসিকতা করে বলে, খুব ফাইন লাগচে। এডি গা' দি যায়ি বৌর সামনে দাড়ালি আপনাক চিনতিই পারবেনান!
রসিকতার মর্মার্থ  শহীদের মুখস্থ; বস্তুটার প্রতি কৌতুহলের মাত্রা বৃদ্ধি করতেই যত সব ফন্দি-ফিকির!
বস্তুত প্রতিটি ব্যবসারই কিছু না কিছু কৌশল থাকে; দোকানী তার কৌশলমতো এগিয়ে চলে। কিন্তু শহীদের এতে ভ্রুক্ষেপ নেই, তার নিজের মধ্যে যে অর্ন্তদ্বন্দ তা সামাল দিতেই সে ব্যতিব্যস্ত। নারিকেল গাছের বাঁকানো মাথা থেকে ইদুরের বাচ্চা পুকুরের পানিতে পড়ে গিয়ে যে ভাবে হাবুডুবু খায়, তার অবস্থাও তাই। মাথার মধ্যে বিস্তর ভাবনা আসে; জোয়ারের পানির মতো ভাবনা এসে ক্রমশ জট পাকায়।  কখনো-বা আনমনে মাথা ঝাঁকায়।
দোকানীর চোখে-মুখে হতাশার পূর্বাভাস। ম্লানমুখে বলে, জলদি করেন ভাই। দিনুমান খাটাখাটনি করি আর ভাল্লাগচে না; চাড্ডি সদায়পাতি করি বাড়ি যাতি হবে।
ঘরে ফরার তাগাদা কার না থাকে, কিন্তু চাইলেই কি ফেরা সম্ভব! শহীদ নিজেও সময় মতো ফিরতে পারেনি। কয়েকমূহুর্ত ভেবে দোকানীকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে, একখান কতা বুলতাম ভাই।
দোকানীর চোখে-মুখে স্পষ্টই বিরক্তির চিহ্ন। সোয়টারটি যে আর বিক্রি হচ্ছে না, এমন একটি ধারনা তার মধ্যে বদ্ধমুল। কেনোনা ক্রেতার হাবভাব দেখে অনেক কিছু বুঝতে পারে সে।  এলোমেলো কাপড় ভাঁজ করতে করতে বলে, এতো বুলাবুলির কি আচে, নিলি নেন না নিলি কাটি পড়েন- মন-মেজাজ ভালো না।
খানিকটা বিচলিত হওয়ার ভঙ্গিতে শহীদ বলে, বুলচি, এই ছুইটারডা আপনার কাচে আলু কেরাম করি!
দোকানী এবার মনে-মনে হোঁচট খায়, ছেলেটি কি তার সাথে রসিতকা করছে! নাহ, অসময়ে এই রসিকতা ভালো লাগে না।  তিরতির করে মেজাজ উত্তপ্ত হতে শুরু করে। রুক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, কেরাম করি আলু মানে! এই রাতির বেলা ন্যাকা ঠাপাইনির জাগা পাচ্চু না, তাইনা? মাতা গরম করি দিয়েন না, ভালোই ভালোই কাটি পড়েন, তা না হলি কপালে বেমত্তি আচে!
সোয়েটার হাতে শহীদ আরো কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে। আওলা দৃষ্টিতে ছড়ানো-ছিটানো কাপড়, ভাঙা টুল, পানির বদনা, এক জোড়া চপ্পল, টিফিন বাটি দোকানীর অবয়ব লক্ষ্য  করে।
বেচারা!
ভাঙাচোরা মুখ।
খোঁচা-খোঁচা দাড়ি।
উসকো-ভুসকো চুল।
তিরিক্ষি মেজাজ।
শুরুতে কিন্তু মেজাজ এমন তিরিক্ষি ছিল না। কিংবা থাকলেও শহীদ তা খেয়াল করেনি। এই খেয়াল না করার জন্য সে কাকে দায়ী করতে পারে; গোলাপী, দোকানী না কি সে নিজে! নাহ, অন্য কেউ না, দোষ তার অদৃষ্টের, তার চোখেরএতো এতো মানুষ থাকতে তার চোখই ওখানে হোঁচট খাবে কেনো; কেনো পুরানো স্মৃতির তানপুরায় টান পড়বেআরো কিছুক্ষন অপেক্ষার পর শহীদ অসহায় ভঙ্গিতে জানায়, ছুইটারডা একেন অ্যালু কেরাম করি!
মূহুর্তের মধ্যে দোকানীর মুখচ্ছবি বদলে যায়।
শহীদের চোখে-মুখেও বিস্ময়; বিস্মিত হয় দোকানী বাবলুর অঙ্গভঙ্গি দেখে। চোখের পলকে লোকটি যেনো বাঁদুরনাচ নাচতে শুরু করেহাতের জামা-কাপড় শূন্যে ছুঁড়ে মেরে মারমুখী হয় ওঠে, অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে, এই শুয়োরের বাচ্চা এই, চিটারি করার আর জাগা পালি নিখানকি মাগীর ছেলি, আমার সাতে চাইলবাজি! দাঁড়া, দেকাচ্চি মজা; তুরা আয় তো, শালাক আগে চুদি নি!
দুরে দাঁড়িয়ে  মজা দেখলেও, বাবলুর আহবান জিনা, কামাল, হাফিজ উপেক্ষা করতে পারে না। ব্যবসা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদ থাকলেও বিপদের সময় দুরে থাকা অন্যায়। তাছাড়া শহীদের আচরণ কথাবার্তায় তারা অখুশি। বরং মনে হয়েছে, একটাকে শাসন করলে আরো দশটা ভয় পাবে, অন্তত কাপড় চুরি হওয়া বন্ধ হবে।
মাটিতে পড়ে গিয়েও শহীদের শেষরক্ষা হয় না; এলোপাতাড়ি কিলঘুষি অব্যহত থাকে। জীনার শরীরে খুব একটা জোর নেই, রোগ-শোকের সাথে লড়াই করে ক্লান্ত। সেও থেমে নেই; পাঠকাঠির মতো টিংটিঙে হাতের মাসল ফোলানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কণ্ঠের তেজ দিয়ে ব্যর্থতা ঘোঁচাতে সচেষ্ট হয়, এই তুরাপ, শালাক  আগে ঠাপা; আগে ঠাপি ফেল তারপর অন্যকতা। শালা কি মনে করিচে আমাগেরভাবচুল হাত গুটি বসি থাকপোন, তাইনাউরি আমার স্যায়ুরেসেই দিন আর নি, মর্গে গি; একুন আমাগেরউ জোট আচে, গায় একফুটা রক্ত থাকতি কারুক ছাড়ি দেবো না!
ব্যবসা করলেও হাফিজ আজন্মের ভিতু। মুখভর্তি কথায় তার মূল অবলম্বন। জোরে বাতাস উঠলেই বুকের মধ্যে কাঁপন ধরে। সে এসব মারামারির মধ্যে নেই। কাপড়ের লাটের উপর ঝুঁপ ধরে বসে থাকে। টিভি পর্দায় হিন্দি সিনেমা দেখছে যেনো-বা!
কয়েকজন পথচারি ছুঁটে আসে, বিক্ষুব্ধ মানুষগুলোর হাত থেক শহীদকে উদ্ধার করে। কেউ একজন উঁচু গলায় জিজ্ঞেস করে, ছেলিডা কিডা, অরাম করি মাচ্চু কেনে; সে তুমাগের কি এমন ক্ষতি করিচে?
ঘটনার বিবরন শুনে মানু উল্টো শহীদের উপর ক্ষুব্ধ হয়, বিষধর সাপের মতো ফুঁসে ওঠে, পাছার ওপর জোরে জোরে লাত্থি মারে। তার অবস্থান কর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলে, শালা চুতমারানি, নয়া মস্তান মনে হয়।
, শালা নতোন ন্যাটা!
ন্যাটা করবে তে একেন চুদাদ আয়ি কে, বড় লোকের দুকানে যাতি ঠাপায়িচ নাকি!
অমানুষ। শালাগের ঈমান নি, মেদি পালি বেগার ধরে! অনেক অনেক কটুক্তির মাঝেও শহীদ উক্তহীন। নেড়িকুত্তার মতো জড়সড়ো হয়ে শুয়ে থাকে। নিষ্প্রভ  চোখে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর পানে তাকায়। হয়তো একজন চেনাজানা মানুষ অনুসন্ধান করে। ক্ষত-বিক্ষত শরীরের পানে তাকিয়ে দু'একজন পথচারি কষ্ট পায়, মানসিকভাবে আহত হয়, আহারে, এট্টা ছুইটারের জন্যি এত আজাপ! এতুই যেকুন শখ, তালি চুরি না করি চালিই পাত্তু!
হক কতা কয়ুচ।
হক বুল্লি তো হবে না, শালা চোর। চোর কি আর ধর্মের কতা শোনে, মারি ভালুই করি, ইবার পুলিশি দিউয়া দরকার।
পুলিশের ব্যাপারে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করে, দ্যাশে কি বিচার আচে, নি রে ভাই; পুলিশকে বিশ্বাস করা যায় না, চোরের সাথে ওগের বুলাকওয়া থাকে। শুনিচি চোরের কাচ তি পুলিশ নাকি ঘুষ খায়!
পুলিশের প্রতি অনাস্থা নেহায়েত অমুলক নয়। স্বপক্ষে অনেক অনেক নজির আছে। চোখকান খোলা রাখলেই দেখা যায়-
পুলিশ পাহারায় নেশার আড্ডা।
জুয়ার টেবিলে বখরা।
ক্ষমতার অপব্যবহার।
ভ্রাম্যমান পতিতার জামিনদার।
চোর-পুলিশের সহাবস্থান।
গ্রেফতারের নামে চাঁদা আদায়।
অনেক ভেবেচিন্তে অন্য একজন পরামর্শ দেয়, এক কাজ করো, শালার একখান হাত কাটি দেও, তালি সারাজীবন মনে থাকপে। 
উচিত বিচার; আরব দ্যাশে হলি তাই কোরতু।
নেতিয়ে পড়া ঘাড়টা যতটা সম্ভব উঁচু করে সে। কথপোকথনরত মানুষগুলোকে লক্ষ্য করে। ধরা গলায়  শহীদ কিছু বলতে চায় কিন্তু বাঁধার মুখে বলতে পারে না, চুপ শালা চুপ, মিত্যি কতা বুললিই মুকির মদ্দি গু পুরি দেবো।
আগত পথচারীদের কাছে শহীদ বড়জোর পশুতুল্য! তার সম্মুখেই চলতে থাকে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা। চুরি চোর বিষয়ক আলোচনা-সমালোচনা। চুরি বিদ্যার মহত্ব নিয়ে অনেকে ফিরিস্তি আওড়ায়। হাজার মারধর করলেও চোরদের নাকি কষ্ট হয় নাকষ্ট নিবারনের জন্য তারা বিশেষ এক ধরনের তাবিজ-কবোজ ব্যবহার করে। শহীদের কাছেও  নিশ্চয় তাবিজ আছে! দু'জন তত্বতালাশ করার অভিমত দেয়।

বনিক সমিতির নেতাদের আগমনে দৃশ্যপটে  নতুন মাত্রা যোগ হয়। টর্চের আলো ফেলে শহীদকে নিঁখুতভাবে নিরীক্ষণ করে। ছেলেটির মুখে ফুরফুরে দাড়ি দেখে সভাপতি কিঞ্চিত বিচলিত। কতিপয় বিশেষ ভাবনায় ভাবিত হয়। টর্চ লাইটটা পকেটে পুরতে-পুরতে মুখ কাঁচুমাচু করে বলে, দাড়ি দেকি তো ছেলিডাক চোর বুলি মনে হচ্চে  না!
দোকান মালিক সমিতির সম্পাদক কটাক্ষের তীর ছোড়ে, বোলেন কি, ছেলিডা তালি সাদু না কিতালি তো আমাগেরই অন্যায় হয়িচে ; জামোই আদর করি এতুক্ষুণ বাড়ি নি যাউয়া দরকার ছিলু
সম্পাদকের কটূক্তি সভাপতি গায়ে মাখে না। দিনকাল যা পড়েছে, তাতে কেঁচো খুড়তে সাপ না উঠে যায়তাছাড়া সাপ বিষয়ক ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব বলে মনে হয়। ছেলেটির বেশভূষাতেও জাতীয় লক্ষণ বিদ্যমান।
আচ্চা, ছেলিডা আবার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য না তো!
তা আবার অসম্ভব কি, হলিউ হতি পারে; তাকাইনি-তুকুইনির ভাব দেকি কি কিচু বুজা যাচ্চে না?
একযোগে প্রায়  সবগুলো চোখ শহীদের চোখের উপর আছড়ে পড়ে। খাঁ-খাঁ দৃষ্টিতে বিশেষ কিছু আবিস্কারের নেশায় ব্যতিব্যস্ত।  মিল-অমিল লক্ষ্য করে। নিচু গলায় একজন আরেকজনকে বলে, আমার তো মনে হয় ছেলিডা জেএমবির সদস্য!
এমন সম্ভাবনা কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না; দিতে পারে না। চারদিকে যেভাবে সন্ত্রাসবাদের জয়-জয়কার, তাতে কার মধ্যে কি আছে বলা দায়! তাছাড়া কেউ কি আন্দাজ করতে পেরেছিল, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সংগঠনটি একযোগে সারা বাংলাদেশে বোমাবাজি করতে পারে! খুবই ভয়ানক অবস্থা; সূশৃঙ্খল লোকবল এবং বিশেষ মহলের ইঙ্গিত ছাড়া সভ্য দেশে এমন অবস্থা অকল্পনীয়!
শহীদের ব্যাপারে ওরা খুব সাবধানে অগ্রসর হয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করে, ভাই, তুমার নাম কি; বাড়ি কনে; থাকো কনে; কি করো?
শহীদ আগের মতোই নির্বিকার। নিষ্প্রভ চোখে মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করে। জনসমাগম ক্রমেই কমতির দিকে। দিনান্তের কর্মব্যস্ততা শেষে যে যার মতো ঘরমুখো। শহীদের ঘটনাটি না ঘটলে নিকছন পট্টিও এতক্ষণে জনশূন্য হয়ে যেত।
মানুষের জমায়েত দেখে একজন বাউল এগিয়ে আসে।
কানু বাউল।
লালন ভক্ত।
সংসার বৈরাগী মানুষ সে।
একতারা বাঁজিয়ে হাটে-বাজারে গান গেয়ে ভিক্ষা করে; সাগরেদদের কাছে সাঁইজীর কিংবদন্তি নিয়ে বুক ফুলিয়ে গল্প করে; গাজায় দম দিয়ে চোখ বন্ধ করে আস্তানায় পড়ে থাকে।
বাউলের চোখে চোখ পড়তেই শহীদ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। বাউলও বিস্মিত! পুরাতন ক্ষোভ-অভিমান ভুলে বাউল জিজ্ঞেস করে, বাবা শহীদ, তুমি একেনে! তুমার এই দশা হোলু কেরাম করি?
শহীদের চোখে পুনরায় জলের ধারা; গাল বেয়ে ধারা ফোঁটায় ফোঁটায় নিচে নামতে শুরু করে। নিজের দুরাবস্থার কথা বলতে গিয়ে হৃদয়টা ডুকরে ওঠে- চাচা, আমি; উরা আমাক মারি ফেল্লু, যেরাম করি পারো বাচাউ আমাক।
কিন্তু চুরি বিষয়ক উপাখ্যান কানে আসতেই সাধুবাবার মুখচ্ছবি আমুল বদলে যায়। ক্ষেদ্যোক্তির স্বরে বলে, ছে ছে ছে, শেষ পর্যন্ত চোরের খাতায় নাম নেকালি!
আকাশের পানে দু'হাত তুলে পুনরায় সে ফরিয়াদ করে, গজপ দেউ সাঁই, গজপ দেউ; ছুড়াডা যে গিরামের মুকি চুনকালি মাকালু!
মানুষের অবস্থান দেখে সাধুবাবা ডানে-বামে থুঁতু ছিটায়। কপাল চাপড়িয়ে নিজের হতাশা প্রকাশ করে।
অবশ্য হতাশার মাঝেও দোকানীরা আলোর দিশা খুঁজে পায়। পরিচয় জানতে বাউলকে জিজ্ঞেস করে, বাবা, ছেলিডাক আপনি চেনেন নাকি?
বাউল হাসে আর মাথা ঝাঁকায়, চিনবো না কেনে, আমা কিয়ামত মুন্সির ছেলি ও।
কথার মাঝখানে কয়েক মূহুর্ত ভেবে পুনরায় বলে, বদমাইশ ছেলি কনেকার! মাদরাসায় দু-কিলাশ পড়ি চেটাম চেটাম কতা শিকি; কতায় কতায় ফতুয়া দেয়, আমারা নাকি সুমাজ নষ্ট কচ্চি! বোলে কি, আমাগের না কি গিরাম ছাড়া করবে!
সভাপতির বুকের মধ্যে এবার সত্যি-সত্যি কাঁপুনি শুরু হয়। নিশ্চয় কোন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হবে। আসন্ন বিপদের কথা চিন্তা করে ব্যাপারির কানের কাছে মুখ এনে ফিস-ফিস করে বলে, আলামত ভালো না গো ভাই, ছেলিডাক ছাড়ি দিতি বোলেন; তা না হলি বাইল-বাচ্চা সুদ্দু মোরবু নাকি!
সভাপতির আশংকা অমুলক নয়, অনেক আগেই এদিকটা ভাবা উচিত ছিল। ব্যাপরির মতো আরো অনেকেই চিন্তিত।  ঘটনার জন্য দোকানী বাবলুকে উল্টো দোষারোপ করে, কামডা তুমি ঠিক করো নি বাবলু, সপ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা তুমার অব্যেস। একুন ঠেলা সামলাউ!
কেনে চাচা, আমি আবার কি দোষ কল্লাম?
ক্ষোভের সাথে বাবলুকে জানায়, ছেলিডাক অরাম করি মারার কি দরকার-খুপ অন্যায়; ইর জন্নি তুমার জেল হতি পারে, তা জানো?
অন্যসব দোকানীর মধ্যেও পরিবর্তন। লুঙির বাঁধন খুলে জিনা ইতিমধ্যে ঢিলেঢালা ভদ্রলোক। ব্যাপারীর কথায় সেও একমত, আগেই কচালাম ভাইজানের গায় হাত দিউয়ার দরকার নি। একুন বুজুক ঠেলা; একখান তো মোটে ছুইটার, দি দিলিই পাত্তু!
হাফিজের মধ্যেও পিছুটান, আমরা বাপু ছা-পুষা মানুষ, এতসব ঝামিলির মদ্দি নি; যার নেটা সেই বুজুক, আমরা চল্লাম।

দুই:
ছেলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাবা কিয়ামত মুন্সিও হতবাক! লোকমুখে শুনে কথাটা বিশ্বাস হয় নি; মনে হয়েছে, আর যায় হোক তার ছেলে চোর হতে পারে না। কিন্তু এক ফুৎকারে তার বিশ্বাসের খুঁটি উপড়ে যায়। নিজের চোখকে সে অবিশ্বাস করবে কিভাবেবয়ষ্ক লোকটি দু'হাত দিয়ে মুখ ঢেকে শিশুর মতো কাঁদে। তার আহাজারীতে রাতের পরিবেশ আরো খানিকটা ভারি হয়ে ওঠে। এমন ছেলে জন্ম দেওয়ার জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হয়; সম্ভব-অসম্ভব নানামুখি আশংকায় শংকিতও বটে।
প্রবল আক্রোশে হঠাৎ করেই ছেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারে, হারামির বাইচ্চা, এই ছিলু আমার নসিবিআজ তোক খুন করিই ফেলাবু; আমার হাত তি কুনু শালা তোক বাঁচাতি পারবেনান।
একজন পিতার হাহাকার অসংখ্য পিতার হৃদয়ে প্রতিধ্বনীত হয়, আহা, এমন পিতার অমন কুলাঙ্গার সন্তান!
বাবার আচরণে শহীদ নিজেও হতাশ। কণ্ঠে অভিমান ঝরে, বাপজান, তাগের নাকাল তুমিউ আমাক ভুল বুজছু; মাচ্চু!
মারবো না তে পুজু কোরবু নাকি? তুই আমার জানের দুশমন।
ক্যান, আমি তুমার কি ক্ষতি কল্লাম?
কিয়ামত মুন্সি হাফাতে হাঁফাতে বলে, কি কল্লাম মানে, তুই চোর, চুরি কত্তি যায়ি ধরা পড়িচিস; আমার সাত-পুরুষির মুকি চুনকালি মাকাইচিস। তুই আমার ছেলি না; আজ তিকি তোর সাতে কুনু সম্পক্ক নি, ভাববু আমা শহীদ মরি গি!
খুঁটিতে হেলান দিয়ে দু'হাতে মুখ ঠেকে মুন্সি কাঁদে।
বাবার আগমনে শহীদের মনে যে আলোর দিশা দেখা দিয়েছিল দপ করেই তা আবার নিভে যায়, মনে মনে বিরক্তও হয়। কেউ তার কথা শুনতে চায় না, আতœপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেয় না। অসহায় ভঙ্গিতে শহীদ তারাহীন রাতের আকাশ পানে তাকিয়ে থাকে। আকাশের মতোই তার জীবনে আজ ঘোর অন্ধকার। অথচ সূচনায় ছিল বহুমুখী সম্ভাবনার ইঙ্গিত। গোলাপীর আঙিনা মাড়িয়ে আরো দুর পর্যন্ত তার ভাবনা পা বাড়িয়েছিল। মুখোশের আড়ালে কতিপয় মুখোশধারীর মুখোশ উন্মোচনের সম্ভাবনা।                                         অথচ যোগফল শূন্য!
বাবার আর্তনাদ নিরেট বাস্তব হয়ে তার বুকে বাজে, মরন দেউ খুদা, তুমি আমার মরন দেউ; দুনিয়া তিকি তুলি নেউ- এতবড় অপমান আমি কেরাম করি সয্যু কোরবু! আহা, আগেই যেদি জানতাম তালি আচিঘরে উর মুকি জওর দিতাম!
কি আছে ওই লাল রঙের সোয়েটারে!
মুন্সি আকাশ-পাতাল ভাবে। কিছুতেই হিসেব মেলাতে পারে না। গত বর্ষার কথা- উত্তরাঞ্চলে তখন প্রবল বন্যা, মানুষের জীবনে ঘোর অন্ধকার। ঘর-বাড়ি হারিয়ে সবাই খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছে। চারদিকে থৈ-থৈ জল। ফসলহীন চোখে জলের ধারা। মহামারি আর দূর্ভিক্ষ জীবনের নিত্য সঙ্গি। আর সবার মতো শহীদের অন্তরটাও গুমরে কেঁদেছিল। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পাওে নি; মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করে, দলবদ্ধভাবে ত্রাণ সংগ্রহ শুরু করে। কিয়ামত মুন্সিও সেদিন ছেলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অমানবিক সময়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল! পুরাতন জামা-কাপড়, টাকা-পয়সা, খাবার-দাবার যে যা দিয়েছিল তাই ওরা হাত পেতে নিয়েছিল। বাবা কিয়ামত মুন্সির উপস্থিতিতে শহীদ নিজে ঐসব ত্রাণ উপজেলা ত্রাণ অফিসে জমা দিয়েছিল।

থানা-পুলিশ করতে না চাইলেও পুলিশ এসে হাজির হয়। রাতের পরিবেশ আলোড়িত করে নিজেদর উপস্থিতি জানান দিতে অকারণে গাড়ির হর্ণ বাজায়। গলা চড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, হেই, কি হইছে এইহানে? এতো ভিড় কিয়ের লাগি?
মেদবহুল শরীরে দারোগার বুটজোড়ায় মচমচ শব্দ ওঠে। উপস্থিত জনতার তোয়াক্কা না করে শহীদের মুখোমুখি দাঁড়ায়।  হাতের লাঠি দিয়ে পেটে গুতো মেরে জিজ্ঞেস করে, কিরে হালার পো, নাম কি, থাকোছ কই, লাইনে কদ্দিন?
দারোগা বাবু মুক ফিরিয়ে হাসে আর পান চিবায়। কথার সাথে মাঝে মাঝে রং মিশ্রিত থুঁতু শূন্যে আছাড় খায়, বুজলেন ভাইসাব, শালারে জঙ্গি মনে অয়।
নেতা গোছের দু'একজন নড়েচড়ে বসে। চোখের ইশারায় একে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় করে। মনে মনে পুলিশের বিচক্ষণতার তারিফ করে। ছেলেটা যে জঙ্গি, প্রথম দর্শনেই ওরা বুঝতে পেরেছিল; বুঝতে পারে নি কেবল বাবলু। বুঝলে বোধহয় উঠকো ঝামেলা কাঁধে তুলতো না।
থুঁতনিতে লাঠি বাঁধিয়ে দারোগার তার মুখটা উঁচিয়ে ধরে। নিরেট পাথরের মতো মুখ। লাইটের আলোয় চোখের জল এবং ধূলোবালি ঝিলিক দিয়ে ওঠে। আয়েশী ভঙ্গিতে দারোগা জানতে চায়, কিরে, বাংলাভাইরে চিনোছহেই তোর কিতা লাগি, মামু না খালু?
বড় নিষ্ঠুর রসিকতা! কিয়ামত মুন্সি যেনো আঁধারের সাথে মিশে যেতে চায়! শহীদ নিরুদ্বেগ। দারোগার চোখে চোখ রেখে পুনরায় মাটিবর্তী হয়ে যায়। সভাপতি বিচলিত। ভালোয় ভালোয় ঝাঁমেলা চুকে গেলে হাফ ছেড়ে বাঁচতো। পুলিশদের মাথায় অন্য হিসেব- ছেলেটার বিনিময়ে নিশ্চয় মোটা অংকের টাকা পাওয়া যাবে!
দারোগার মনে খুশির উচ্ছ্বাস।
কিয়ামত মুন্সির দীর্ঘশ্বাস।
শহীদের চোখে-মুখে অবিশ্বাস।
ঘটে যাওয়া ঘটনা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। চোয়াল শক্ত করে ডানে-বামে মাথা ঝাঁকায়। বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে, বাপজান, আমি একখান কতা বুলতি চাই!
শহীদের ভরাট কণ্ঠস্বর। হারানো আত্মবিশ্বাস যেনো ফিরে পেতে শুরু করেছে। কিন্তু কিয়ামত মুন্সি বাঁধা দেয়; আপত্তি করে, না, তোর কিচু বুলতি হবেনান।
শহীদ তথাপি অনুনয় করে, তুমাগের দুয়াই লাগে, আমাকে এট্টু কতা বুলতি দেউ।
দারোগা বাবু স্বউদ্যোগী হয়ে তাকে কথা বলার অনুমতি দেয়, কও কও, কি কবা কও বাপু।
কিয়ামত মুন্সির পিঠ চাপড়ে সে বলে, ভাইছাব, এতই যখন দুখ, তো অরে কিছু কইতে দ্যান।
কিয়ামত মুন্সির মনের মধ্যে অস্থিরতা; বিপদের আশংকায় শংকিত। কথা বলতে গিয়ে কি না কি বেঁফাস বলে ফেলে। যদি নতুন ঝাঁমেলা শুরু হয়; যদি টাকার অঙ্ক বেড়ে যায়!
পুলিশের বড়বাবু শহীদেও কাঁধে লাঠি রেখে বলে, হারে, এতো কিসির কতা তোর!
শহীদ বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, বাপজান, আমি চোর না; একেনে চুরি কত্তিউ আসিনি!
দারোগা বাবু স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে বলে, কছ কিরে বাপ!
জ্বি, আমি চোর না।
লাল রঙের সোয়েটারটা শহীদ তার বাবার পানে ছুঁড়ে মেরে জিজ্ঞেস করে, বাপজান, ভালো করি দেকো তো, এডি চিনতি পারো নাকি!
কিয়ামত মুন্সির মনে হয়, সে নিজেও এতক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিল। চরম এক সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার ঘোর ছুটতে শুরু করে। দুহাত দিয়ে কপাল চাপড়ায়। বুঝতে পারে না, কেমন করে মোটা অংকের টাকা জোগাড় করবে!
লেখক পরিচিতি:
পিন্টু রহমান।
গল্পকার। সম্পাদক- জয়ত্রী। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ- ‘পাললিক ঘ্রাণ’ (ফে: ২০১৪ খ্রী:) পরাণপাখি’ (ফে: ২০১৫খ্রী:) মোবাইল- ০১৭১৪-৭৩০ ৭২০। কুষ্টিয়া।




Post a Comment

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget