অস্ট্রিয়ায় নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপের (এনএসজি) দুই দিনের আলোচনায় ভারতের সদস্যপদের আবেদন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভিয়েনায় আয়োজিত ওই বৈঠক শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সদ্যসমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্র সফরে দেশটিকে এ বিষয়ে সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
এনএসজির সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছিল ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তানও। একই বৈঠকে পাকিস্তানের আবেদন নিয়েও আলোচনা হয়। তবে সে ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ভারত ১৯৭৪ সালে পরমাণু বোমা পরীক্ষা করার পরপরই বিশ্বের ৪৮টি দেশ মিলে গঠন করেছিল নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ। উদ্দেশ্য ছিল পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনা। বেসামরিক কাজে পরমাণু প্রযুক্তির ব্যবহার এর অন্তর্ভুক্ত। কয়েক বছর ধরে ভারত এই গ্রুপের সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করছে।
এনএসজিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে জোর সমর্থন দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সমর্থন ছিল সুইজারল্যান্ডেরও। কিন্তু ভিয়েনার বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এ সংগঠনে ভারতের অন্তর্ভুক্তি তাই অন্তত পিছিয়ে গেল। ২০ জুন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে এনএসজির পরবর্তী বৈঠকে দেশটির আবেদন নিয়ে আবার আলোচনা হবে।
ভিয়েনার বৈঠকে ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে এনএসজির সদস্যদেশ তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থান কিছুটা নরম ছিল। দেশগুলো এ নিয়ে জোর আপত্তি তোলেনি। মূলত প্রতিবেশী চীনের বিরোধিতার কারণেই আটকে গেছে ভারতের আবেদন।
ভারতের আবেদনের বিরোধিতায় চীনের যুক্তি হচ্ছে, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) হচ্ছে এনএসজির মূলমন্ত্র। ভারত এখনো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। ফলে দেশটি এনএসজিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। এ ছাড়া এনএসজিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্বশক্তির কাছে ‘বৈষম্যহীন নীতির’ দাবি করছে চীন। দেশটির বক্তব্য হলো, ভারতকে সদস্য করা হলে পাকিস্তানকে কেন করা হবে না? এ ব্যাপারে বৈষম্য হলে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু প্রতিযোগিতা মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
ভারত কয়েক দিন আগেই এ ধরনের আরেকটি সংগঠন মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিমের (এমটিসিআর) সদস্য হয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন জানিয়েছে, দেশটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, কোনো একক রাষ্ট্রের কাছ থেকে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা না করে পাকিস্তানের উচিত আবেদনটি এনএসজির বৈঠকে সব সদস্যদেশের সামনে উত্থাপন করা।
গত মাসে পাকিস্তানও এনএসজির সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের আবেদন হালে পানি পাচ্ছে না। তাই সম্প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য একটি আবেদন মার্কিন কর্মকর্তা ও আইনপ্রণেতাদের কাছে পাঠিয়েছিল পাকিস্তান।
ভারত এনএসজির সদস্য না হলেও সংগঠনটির সদস্যদের যেসব অধিকার রয়েছে, দেশটি ইতিমধ্যে তার অনেকগুলোই ভোগ করছে। এনএসজির বাইরে থাকা দেশগুলো পরমাণু প্রযুক্তি ও পরমাণু জ্বালানির অবাধ লেনদেন করতে পারে না। সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ২০০৮ সালে ভারত সেই ছাড়পত্র পেয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু সহযোগিতা চুক্তির কারণেই দেশটি ওই সুবিধা পায়।

Post a Comment