এবারের লিগে আবাহনী মানেই বিতর্ক। বিতর্কের বোঝা মাথায় নিয়েই মাঠে নামা, প্রতি ম্যাচেই নতুন বিতর্কের শঙ্কা। তবে একটি দিনে অন্তত আবাহনী শিরোনাম হলো ক্রিকেটীয় কারণে, আলোড়ন তুলল মাঠের ক্রিকেট দিয়েই। বুধবার রেকর্ড রান গড়ে রেকর্ড ব্যবধানে তারা হারিয়েছে মোহামেডানকে।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সুপার লিগের ম্যাচে বিকেএসপিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ২৬০ রানে হারিয়েছে আবাহনী।লিটন দাস ও দিনেশ কার্তিকের শতক আর সাকিব আল হাসানের ঝড়ো অর্ধশতকে আবাহনী তুলেছিল ৫ উইকটে ৩৭১। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের মাটিতে ও বাংলাদেশের কোনো দলের সর্বোচ্চ ইনিংস।
সাকিব পরে বল হাতে নিয়েছেন ৫ উইকেট। মোহামেডান গুটিয়ে গেছে ১১১ রানে। ২৬০ রানের ব্যবধানে জয়ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ।
আগের সবচেয়ে বড় জয় ছিল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের। গত ঢাকা লিগে ২৪৭ রানে তারা হারিয়েছিল ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবকে। সেই ম্যাচে রূপগঞ্জের ৩৫৭ রান ছিল বাংলাদেশের কোনো দলের আগের সর্বোচ্চ।
বুধবার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মোহামেডানকে নেতৃত্ব দেন নাঈম ইসলাম। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও মোহামেডানের এক কর্তা জানান, ‘রিল্যাক্স’ হয়ে খেলতেই নেতৃত্ব দেননি মুশফিকুর রহিম।
মোহামেডানের ভজকট পাকানো শুরু সকাল থেকেই। টস জিতে নামে তারা ফিল্ডিংয়ে। ৪৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পর ফেরেন তামিম ইকবাল। দ্রুত ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্তও। এই সময়ই শুধু ক্ষণিকের জন্য মাচে ছিল মোহামেডান।
তৃতীয় উইকেটে দারুণ ব্যাটিংয়ে আবাহনীকে এগিয়ে নেন লিটন ও কার্তিক। দু:সময়ে পেছনে ফেলে রানে ফেরার ম্যাচটি লিটন স্মরণীয় করে রাখলেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে।
১০২ বলে স্পর্শ করেছিলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক; শেষ পর্যন্ত ১৮ চার ও ১ ছক্কায় করেছেন ১২৫ বলে ১৩৯।
এবারের লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই কার্তিক করেছেন ৯৭ বলে ১০৯। প্রথম অর্ধশতকে ৬৬ বল লাগলেও ভারতের এই ব্যাটসম্যান পরের পঞ্চাশ করেছেন ২৩ বলে।
তৃতীয় উইকেটে দুজনের জুটিতে এসেছে ১৫০ বলে ১৬২ রান। ঝড় তোলার আদর্শ মঞ্চ পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন সাকিব। ২২ বলে ছুঁয়ে ফেলেন পঞ্চাশ, যা এবারের লিগের দ্রুততম অর্ধশতক। আউট হন ৫ ছক্কায় ২৪ বলে ৫৭ করে।
পরে মোসাদ্দেক ও আবুল হাসান খেলেছেন দুটি ছোটো কিন্তু কার্যকর ইনিংস। শেষ ১০ ওভারে আবাহনী তোলে ১২২ রান।
ম্যাচের ভাগ্য একরকম নিশ্চিত হয়ে যায় প্রথম ভাগেই। দেখার ছিল কত হয় জয়-পরাজয়ের ব্যবধান। সাকিবের বোলিং আর মোহামেডানের বাজে ব্যাটিং নিশ্চিত করেছে, ব্যবধানটা রেকর্ড গড়া!
অধিনায়ক নাঈম তিনে নেমে করেছেন ৩ ছক্কায় ৩২। চারে নেমে মুশফিকুর রহিম ২৬। বাকি সব ব্যাটসম্যান ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। মোহামেডান খেলতে পারেনি ২৫ ওভারও।
ঘরোয়া লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথমবার ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। নতুন বল হাতে নিয়ে ৬.৩ ওভারে ১৮ রানে ৫ উইকেট।
ম্যান অব দা ম্যাচ অবশ্য লিটন, এই ভূমিধস জয়ের শুরুটা যার হাত ধরে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী: ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৭১/৫ (তামিম ২২, লিটন ১৩৯, শান্ত ৭, কার্তিক ১০৯, সাকিব ৫৭, মোসাদ্দেক ১৯*, আবুল হাসান ১২*; হাবিবুর ০/৩৩, ইমন ০/৩২, পেরেরা ১/৭৫, নাঈম ১/৪৫, এনামুল জুনিয়র ১/৮৪, ফয়সাল ০/৪৬, আরিফুল ২/৫৫)।
মোহমেডান: ২৪.৩ ওভারে ১১১ (সৈকত ৫, ইজাজ ৩, নাঈম ৩২, মুশফিক ২৬, পেরেরা ৫, আরিফুল ১৭, ফয়সাল ৩, মিলন ২, হাবিবুর ৪, ইমন ১১, এনামুল জুনিয়র ০*; তাসকিন ১/২২, সাকিব ৫/১৮, সাকলাইন ২/২৭, আবুল হাসান ০/১১, শান্ত ০/৭, মোসাদ্দেক ২/১২, অমিত ০/১৩)।
ফল: আবাহনী ২৬০রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন দাস।

Post a Comment