প্রান্তজন রিপোর্ট: নাটোরের নলডাঙ্গায় পটল নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক। ক্রেতা না থাকায় কৃষকরা সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বচ্চো ৪০ টাকা দরে পটল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ভ্যান গাড়িতে করে হাটে আনতে মন প্রতি ১০ টাকা করে খরচ হয়েছে। তাই অনেকে পটল বিক্রি না হওয়ায় পরিবহন খরচ বাঁচাতে রাস্তা ও রাস্তার পার্শ্বে ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন ওই পটলগুলো। দাম কম হওয়ায় এখন পটল কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নলডাঙ্গারহাটের সবজীর পাইকারী বাজার ঘুরে এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এসময় শতশত মন পটলের আমদানি দেখা গেলেও ক্রেতার কোন হাঁক ডাক নেই। মাত্র কয়েক জন পাইকার এসেছে পটল কিনতে। তাদের চাহিদা কারো ২৫ মন, কারো ৫০ থেকে ৬০ মণ। অথচ হাটে পটল এসেছে পাইকারদের মতে ৪ থেকে ৫’শ মন।
ফলে ক্রেতা না থাকায় হাটে পটল বিক্রি করতে আসা কৃষকদের কেউ কেউ সুযোগ বুঝে এক মন পটল সর্বচ্চো ৩০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। অধিকাংশ কৃষক পটল বিক্রি না হওয়ায় তারা রাস্তার পার্শ্বে ভাগারে অথবা রাস্তায় ফেলে রেখে গেছেন।
কেউ কেউ বস্তায় বা বস্তা থেকে ঢেলে রাস্তার ওপরে স্তুপাকারে ফেলে রেখে গেছেন। কেননা, বিক্রি না হওয়া পটল আবার ফিরে নিতে পরিবহন খরচ প্রয়োজন হবে নতুবা কোথাও ফেলে দিতেই হবে তাদের। ফলে ফেলে যাওয়া পটল এখন রাস্তায় বেওয়ারিশ হয়ে পড়ে আছে।
হাটে পটল বিক্রি করতে আসা শাখাড়িপাড়া গ্রামের কৃষক সুলতান আলী জানান, প্রতি সপ্তাহে এক বিঘা জমিতে ৬/৭ মন করে পটল উত্তোলন করা হয়। রোজার শুরুর দিকে প্রতি মন পটল ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। সেই পটল এখন ১০ টাকা থেকে সর্বচ্চো ৩০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এক মন পটল হাটে আনতে পরিবহন খরচ হয় ১০ টাকা আর বিক্রি যদি ১০/২০ টাকা দরে বিক্রি হলে পরিবহন খরই উঠবে না। এজন্য তিনি সহ অন্য কৃষকরা দুই সপ্তাহ পরপর পটল উত্তোলন করেন। একই এলাকার কৃষক ইব্রাহিম হোসেন জানান, দেরী করে পটল উত্তোলন করলে কৃষকদের রয়েছে আরো বিপত্তী। কারন পরিপক্ক পটল এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জমিতে রাখলে রং বিবর্ণ হয়ে যায় এবং পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকরা আছেন চরম বিপাকে।
বিলপাড়া এলাকার কৃষক খোরশেদ আলম, সুর্য্যবাড়ি গ্রামের মহসিন আলী, হলুদঘর গ্রামের আজাহার আলী জানান, তারা সকাল থেকে বসে থেকে দুপুরে কিছু পটল ২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বাকিগুলো বিক্রি না হওয়ায় রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন। তারা বলেন, এবার পটলের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে কৃষকরা আছেন দুশ্চিন্তায়। অন্যান্য বছর এই সময় পটলের দাম ভাল ছিল। কিন্তু এবার দাম নেই। দাম ভাল হলে আরো ৩ মাস অন্তত পটল বিক্রি করা যেতো। কিন্তু দাম না থাকায় তারা পটলের গাছ তুলে এখন আউশ ধান চাষ করবেন।
হাটে কিনতে আসা পাইকারী ক্রেতা মাঝদিঘার আকবর হোসেন, সিংড়ার খোরসতি গ্রামের আফজাল হোসেন জানান, অধিক পরিমান পটল আমদানি হলেও এসবের অধিকাংশের রং বিবর্ণ এবং অধিক পরিপক্ক। তাই এসব পটল বিক্রি করা তাদের জন্য কষ্ট হয়।

Post a Comment